কাবুলের নিরাপত্তায় হাক্কানি নেটওয়ার্ক, আফগানদের বিক্ষোভ

রাজধানী কাবুলসহ চলতি সপ্তাহে পুরো আফগানিস্তান দখলে নিয়েছে তালেবান। এরপরই রাজধানী কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব কট্টরপন্থি হাক্কানি নেটওয়ার্কের যোদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়েছে গোষ্ঠীটি।

এদিকে কাবুল দখল নিয়ে দেশটির ক্ষমতায় এসে আফগান জাতীয় পতাকা নামিয়ে তালেবানের পতাকা উত্তোলন নিয়ে দেশটিতে বিক্ষোভের মুখে পড়েছে তালেবান। কাবুলের ১৫০ কিলোমিটার উত্তরের পাঞ্জশির উপত্যকায় তালেবান গোষ্ঠীকে প্রতিরোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, কট্টরপন্থি গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদাসহ বিদেশি বিভিন্ন জিহাদি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব হাক্কানি নেটওয়ার্কের হাতে তুলে দেওয়ার খবরটি উদ্বেগজনক এবং এটি তালেবানের দেওয়া প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালের শাসনামলের চেয়ে এবার মধ্যপন্থী পথ বেছে নেওয়া হবে বলে তালেবান প্রতিশ্রুত দিয়েছিল।

এদিকে এর মাধ্যমে আফগানিস্তানে ফের আল-কায়েদার ফিরে আসার সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, তালেবানের এই সিদ্ধান্ত, গত বছর কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার সময় গোষ্ঠীটির নেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে। কারণ সে আলোচনায় তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, আফগানিস্তান আবার বিদেশি জিহাদিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে না।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে খলিল আল-রহমান হাক্কানিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ। সেসময় তাকে গ্রেফতার বা তথ্য প্রদানের জন্য ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। এছাড়া জাতিসংঘের সন্ত্রাসীদের তালিকায়ও নাম রয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্কের।

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ব্রিটিশ কূটনীতিক আইভর রবার্টস ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছেন, হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যদের কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া কার্যত ‘শিয়ালকে মুরগির খামারের দায়িত্ব দেওয়ার সমতুল্য’।

কাউন্টার এক্সট্রিমিজম প্রজেক্ট বা সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী প্রকল্পের সিনিয়র উপদেষ্টা আইভর রবার্টস। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা এবং চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে গবেষণা করে।

আইভর বলেন, তালেবানের এই পদক্ষেপে তিনি বিস্মিত। তার ভাষায়, ‘আমি ভেবেছিলাম, তালেবান এর থেকে একটু বেশি বুদ্ধি রাখে।’

এদিকে, তালেবানের কাবুল দখলের মধ্যে দেশত্যাগ করা ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ এবং প্রখ্যাত এক তালেবানবিরোধী যোদ্ধার ছেলে আহমাদ মাসউদের নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে বলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন।

মস্কোয় এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তালেবান এখনো পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। পাঞ্জশিরে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে।

এর আগে জালালাবাদসহ পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি শহরে জাতীয় পতাকা নিয়ে বুধবার তালেবান বিরোধী বিক্ষোভে অন্তত দুজন নিহত হলেও পরদিনই বৃহস্পতিবার রাজধানী কাবুলেও একই ধরনের মিছিল হয়েছে।

আফগানিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৯শে আগস্ট। এই উপলক্ষে জাতীয় পতাকা নিয়ে কাবুলের মিছিলে গুলি না চালালেও দ্রুত তা ছত্রভঙ্গ করে দেয় তালেবান যোদ্ধারা।

তবে পূর্বাঞ্চলীয় শহর আসাদাবাদে স্বাধীনতা দিবসের এক জমায়েতে লোকজন জাতীয় পতাকা ওড়ালে তালেবান গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জাতীয় পতাকা সরিয়ে সেখানে তালেবানের সাদা-কালো পতাকা উঠিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় এই বিক্ষোভের মাত্রা তেমন কিছু না হলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু আফগান সোচ্চার হয়েছেন।

সূত্র: রয়টার্স, ভয়েস অব আমেরিকা।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.