আফগান সরকারকে তালেবানের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান ইউরোপীয় ইউনিয়নের

সহিংসতা বন্ধে আফগান সরকারকে তালেবানের সঙ্গে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ’র বৈদেশিক নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বন্দোবস্ত এবং নারী, যুবক, সংখ্যালঘুসহ সকল আফগান নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোই আফগানিস্তানের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা অব্যাহত রাখার চাবিকাঠি।

জোসেফ বোরেল বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য নিষ্পত্তি, সব স্টেকহোল্ডারদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি এবং একতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা আফগান সরকারকে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগে উৎসাহিত করি।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ইইউর এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা আফগান সরকারকে সকল রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মীমাংসা, অংশীদারদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো এবং ঐক্যবদ্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে তালেবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে তালেবানকে সহিংসতা বন্ধ ও স্থায়ী অস্ত্রবিরতিতে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন জোসেপ বোরেল। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আফগানিস্তানে এভাবে সহিংসতা চলতে থাকলে, তালেবান জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করলে এবং ফের ‘শরিয়া আইন’ চালু করলে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হতে পারে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই আহ্বানের আগেই তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে কোণঠাসা আফগান সরকার। দুইপক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী কাতারের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে তালেবানের পক্ষ থেকে তাতে সাড়া দেওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। মার্কিন গোয়েন্দাদের বিশ্বাস, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে তালেবান বিদ্রোহীদের হাতে কাবুল সরকারের পতন ঘটবে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবর অনুসারে, ক্রমেই আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তালেবান। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারও দখলে নেওয়ার দাবি করেছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। এ তথ্য সত্য হলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে আফগানিস্তানের ১২তম প্রাদেশিক রাজধানীর পতন হয়েছে তাদের হাতে।

আজ শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, কান্দাহারের গভর্নর অফিসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন দখল করেছে তালেবান বিদ্রোহীরা। যদিও সরকারপক্ষ এখনো পরাজয়ের কথা স্বীকার করেনি। তালেবানের এক মুখপাত্র টুইটারে বলেছেন, কান্দাহার পুরোপুরি জয় করা হয়েছে। মুজাহিদীনরা শহরের শহীদ চত্বরে পৌঁছে গেছে। এএফপির খবর অনুসারে, স্থানীয়রাও নিশ্চিত করেছেন, কান্দাহারের নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে।

এদিকে কাবুলে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস থেকে জনবল আরও কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ-এর মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এসব কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। আর তাদের দেশে ফেরা নির্বিঘ্ন করতে সহায়তার জন্য আফগানিস্তানে বাড়তি তিন হাজার সেনা পাঠাবে বাইডেন প্রশাসন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কাবুলের দূতাবাসটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে না। কিছু জনবল কমানো হলেও দূতাবাস চালু থাকবে। তবে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় কাবুলে মার্কিন নাগরিকদের পদচারণা সীমিত করা হচ্ছে।

পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, দূতাবাস কর্মীদের পাশাপাশি মার্কিন বিশেষ অভিবাসী ভিসা (এসআইভি) আবেদনকারীদের সরিয়ে নিতে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তিন হাজার সেনা পাঠাবে। তবে এসব সেনারা দেশটিতে দীর্ঘদিন অবস্থান করবে না। কারণ এটি একটি অস্থায়ী মিশন। তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মার্কিন বাহিনী আক্রান্ত হলে এর উপযুক্ত পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।

সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.