‘আমানতের সুদ হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না’

ব্যাংকিং খাতে তারল্য বা নগদ টাকার উপচে পড়া জোয়ারের তীব্র প্রভাব পড়েছে আমানতের সুদ হারের উপর। অনেকদিন ধরে টানা সুদের হার কমে চলেছে। কোনো কোনো ব্যাংকে এখন ৩ মাস মেয়াদি আমানতে (Fixed Deposit Receipt-FDR) মাত্র ১ শতাংশ সুদ দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ব্যাংকে আমানতের সুদ হার ৩ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে।

আমানতের সুদের হার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম হওয়ায় ব্যাংকে আমানত রাখায় আমানতকারীর টাকা প্রকৃতপক্ষে কমে যাচ্ছে। এতে একদিকে ব্যাংক-সুদের উপর নির্ভরশীল অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে অনেকে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়ে বিকল্প খাতে বিনিয়োগ করছেন, যার মধ্যে অনেকগুলো খাত বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এমন ধারা চলতে থাকলে এক সময় মানুষ ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়বে এবং উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিবর্তে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়বে।

আলোচিত বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার বেঁধে দিয়েছে। নির্দেশনা অনুসারে, মেয়াদী আমানতের সুদের হার কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম হতে পারবে না।

আজ রোববার (৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে তিনটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে-

ক) ব্যক্তি পর্যায়ের মেয়াদী আমানত এবং বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকতা/কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড,
অবসরোত্তর পাওনাসহ বিবিধ পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে গঠিত তহবিল বাবদ রক্ষিত যে কোন পরিমাণ মেয়াদী আমানতের উপর সুদ/মুনাফা হার মূল্যস্ফীতি হার অপেক্ষা কোনক্রমেই কম নির্ধারণ করা যাবে না;
খ) অনুচ্ছেদ নং-৩(ক) এ বর্ণিত আমানতের উপর কোন নির্দিষ্ট মাসে সুদ/মুনাফা হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঐ মাসের অব্যবহিত
৩ (তিন) মাস পূর্বের মূল্যস্ফীতি হারকে (বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১২ মাস ভিত্তিক গড়) বিবেচনায় নিতে হবে; এবং
গ) ঋণ/বিনিয়োগের উপর সুদ/মুনাফা হার বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৩/২০২০ এর নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯% অপরিবর্তিত থাকবে।

অবিলম্বে এই নির্দেশ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং ব্যাংকিং খাতে দায়-সম্পদ এর ভারসাম্যহীনতা রোধে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে।

উল্লেখ, আমানতের সুদের হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কমে গেলে আমানত থেকে প্রকৃত প্রাপ্তিও কমে যায়। ধরা যাক, মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ। তাহলে আগে ১০০ টাকা দিয়ে যে পণ্যসমূহ কেনা যেত, তা কিনতে এখন ১০৬ টাকা লাগবে। ব্যাংকে আমানতের সুদের হার যদি হয় ৩ শতাংশ, তাহলে বছর শেষে আমানতকারী ১০৩ টাকা পাবেন। এ ক্ষেত্রে তাকে ৩ টাকার পণ্য কম কিনতে হবে অথবা বাড়তি ৩ টাকা ব্যয় করতে হবে, যার ফলে তার আসল টাকা কমে যাবে অথবা তাকে ঋণের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.