বিআইসিএমের সেমিনার: বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনার তাগিদ

বাংলাদেশে ব্যবসায়রত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে গুটিকয়েক মাত্র পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বেশিরভাগ কোম্পানি এই বাজারের বাইরে। এসব কোম্পানিকে বাজারে আনা গেলে বাজারের গভীরতা ও বৈচিত্র বাড়বে। তাই পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে কার্যকর উদ্যোনেওয়া দরকার।

আজ মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) কর্তৃক আয়োজিত ‘বিআইসিএম রিসার্চ সেমিনার-০৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সেমিনারে How to Increase the Depth of the Share Market in Bangladesh: The Potential Role of MNCs শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ড. নাছির উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক, বিআইসিএম। ইনস্টিটিউটের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ রেজাউল করিম, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং জনাব মোঃ রিয়াদ মতিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং মহাসচিব, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। বিআইসিএম-এর ডিরেক্টর (স্টাডিজ) জনাব ওয়াজিদ হাসান শাহ্‌ সেমিনারে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন।

সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণায় বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের গভীরতা বৃদ্ধিতে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর সম্ভাব্য ভূমিকার বিষয়ে করণীয় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রায় সকল বড় বহুজাতিক কোম্পানীকে বিবেচনায় নিয়ে দেখা যাচ্ছে যে ২০১০ সালের পর রবি ব্যতিত আর কোন বহুজাতিক কোম্পানী তালিকাভূক্ত হয়নি এবং অনেক বহুজাতিক কোম্পানী জনগণের কাছে সামান্য পরিমাণে শেয়ার ছেড়েছেন।

গবেষণায় দেখা যায়, কমপক্ষে ১১ টি বহুজাতিক ব্যাংক এবং ১১ টি বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সফলভাবে বাংলাদেশে ব্যবসা করেছেন, যারা কমপক্ষে একটি দেশে তালিকাভূক্ত কিন্তু বাংলাদেশে তালিকাভূক্ত নয়। গবেষণায় শেয়ার বাজারের গভীরতা বাড়াতে-করের হার হ্রাস করা, কমানো করের পুনঃ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, অতালিকাভূক্ত বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর জন্য ব্যাংক লোনের সুদের হার দ্বিগুন বা বৃদ্ধি করা, শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক কোম্পানী যেগুলো অন্য দেশে তালিকাভূক্ত কিন্তু বাংলাদেশে নয় সেগুলো ও অন্য বহুজাতিক কোম্পানী এবং বাপেক্সকে তালিকাভূক্তি নিশ্চিত করা, পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি, জনগণের নিকট আরো বেশী শেয়ার ছাড়ার ব্যবস্থা করা, সুশাসন নিশ্চিত করা, দেশে নতুন আসা বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে তালিকাভূক্তির শর্ত দেওয়া এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।

আলোচনায় জনাব মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান মার্কেটে বিদ্যমান বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর তালিকাভূক্তিতে অনীহার বড় কারণ রেগুলেটরি ব্যাপারে না জড়িয়ে অপেক্ষাকৃত স্বাধীন থাকার মনোভাব। এই সীমাবদ্ধতা দূরীকরণে বিভিন্ন সেমিনার/ ওয়ার্কশপ আয়োজন করা, আইনত বাধ্যবাধকতা, এবং কর ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করা যেতে পারে।

জনাব মোঃ রিয়াদ মতিন বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে তালিকাভূক্তির ক্ষেত্রে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে বলেন, বেশী সংখ্যক আইপিও ইস্যুয়েন্সের বাজারের গভীরতার যেমন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি মার্কেটে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ মন্তব্য করেন যে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্যে শুধু কর নীতিমালার ওপর ভরসা না করে অন্যান্য সুবিধাদির ব্যাপারেও জোর দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুবর্ণ বড়ুয়া এ ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দক্ষ মার্কেটিং টীম তৈরীর মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়াও, উপস্থিত কয়েকজন সল্প সময়ের মধ্যে একাধিক বড় গণ প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা আমাদের পুঁজিবাজারকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে ইনস্টিটিউটের সম্মানিত নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার বর্তমান বিএসইসি কমিশনের নেতৃত্বে ধারাবাহিকভাবে সকল বাধা দূর করে বেশী সংখ্যক বহুজাতিক কোম্পানীর তালিকাভূক্তির মাধ্যমে পূঁজিবাজারের উন্নতির ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সেমিনারে বিআইসিএম এর অনুষদ সদস্যবৃন্দ, কর্মকর্তা এবং অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.