ঈদ সকালের খাবার-দাবার

আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই ঈদ। সেমাই ছাড়া তো ঈদের দিনের কথা কল্পনাও করা যায় না। ঈদের দিন সকালে মিস্টি খাবারের পাশাপাশি কিছু ঝাল খাবারও রাখতে পারেন। আজ থাকছে ঈদ সকালে কিছু নাস্তার রেসিপি।

শাহি দুধসেমাই

উপকরণ: সেমাই ১০০ গ্রাম (ভেঙে ছোট করে নেওয়া), তরল দুধ ১ লিটার, ক্রিম ১৫০ গ্রাম, কনডেন্সড মিল্ক ২৫০ গ্রাম (মিষ্টি বেশি পছন্দ করলে একটু বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে), পেস্তাকুচি ২ টেবিল চামচ, কাঠবাদামকুচি ২ টেবিল চামচ, খেজুরকুচি ৩ টেবিল চামচ, কিশমিশ ৩ টেবিল চামচ, গোলাপজল দেড় চা-চামচ, এলাচগুঁড়া তিন ভাগের এক চা-চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, পেস্তা, কাঠবাদাম, খেজুরকুচি সাজানোর জন্য।

প্রণালি: প্যানে ঘি গরম করে তাতে পেস্তা, কাঠবাদাম, খেজুরকুচি আর কিশমিশ দিয়ে মিনিট দুয়েক কম আঁচে ভেজে তুলে নিতে হবে। একই প্যানে সেমাই ৪-৫ মিনিট ভেজে লালচে হলে নামিয়ে নিন। তারপর সেই একই প্যানে তরল দুধ, কনডেন্সড মিল্ক আর ক্রিম ভালো করে মিশিয়ে একবার ফুটে উঠলে তাতে ভেজে রাখা সেমাই, বাদাম, কিশমিশ দিয়ে দিতে হবে। ভালো করে মিশিয়ে কম আঁচে

৮-১০ মিনিট রান্না করুন। মাঝেমধ্যে অবশ্যই নেড়ে দিতে হবে, নয়তো নিচে লেগে যেতে পারে। এরপর এতে গোলাপজল আর এলাচগুঁড়া মিশিয়ে আরও ২-৩ মিনিট রেখে নামিয়ে নিন। দুধসেমাই ঠান্ডা হলে অনেকখানি দুধ টেনে নেয়। তাই একটু পাতলা অবস্থায় নামিয়ে নিয়ে পরিবেশন পাত্রে ঢেলে ওপরে পেস্তা, কাঠবাদাম, খেজুরকুচি ছড়িয়ে দিয়ে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হবে। চাইলে গরম-গরমও খেতে পারেন।

জর্দা সেমাই 

ঈদের দিনের আরেকটি পছন্দের খাবার হলো জর্দা সেমাই।

উপকরণ : সেমাই আধা প্যাকেট, চিনি স্বাদমতো, ঘি ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ,পানি ১ থেকে দেড় কাপ, এলাচ ২ থেকে ৩ টি ,দারুচিনি ১ টি, তেজপাতা ১ টি, বাদাম ও কিসমিস পরিমানমতো, জর্দা রঙ সামান্য

প্রস্তুত প্রনালীঃ সেমাই গুলোকে ভেঙে টুকরো করে নিতে হবে ।একটি নন স্টিক প্যানে মাঝারি আঁচে ঘি দিয়ে এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা ও কিশমিশ দিয়ে সামান্য ভেজে নিন। এরপর তাতে সেমাইগুলো দিয়ে ভাজতে হবে। সেমাই বাদামি হয়ে আসলে এক কাপ পানি দিন। এখন সামান্য পানিতে জর্দা রঙ গুলিয়ে সেমাইয়ে মিশিয়ে দিন। এখন চিনি দিয়ে নেড়েচেড়ে হালকা আঁচে কিছুক্ষন রাখুন। ৩ থেকে ৪ মিনিট পর ঢাকনা খুলে তাতে বাদাম ছড়িয়ে দিন। সেমাইয়ের পানি শুকিয়ে গেলে এবং সেমাই সেদ্ধ হয়ে আসল কিছুক্ষণ দমে রাখুন। রান্না শেষে সামান্য ঘি দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।

জর্দা

উপকরণ : পোলাওয়ের চাল ২ কাপ, পানি দেড় কাপ, চিনি স্বাদমতো, ঘি ৪ টেবিল চামচ,দারুচিনি,লবঙ্গ, এলাচ কয়েকটি করে,জর্দার রঙ সমান্য, চাল সিদ্ধ করার পানি পরিমাণ মতো, বাদাম কুচি ও কিশমিশ কয়েকটা

প্রস্তুত প্রণালী : প্রথমে চাল ধুয়ে আধ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এতে পরিমাণ মতো মত পানি, দুটি তেজপাতা, সামান্য লবণ, ১চা চামচ তেল ও জর্দার রঙ দিয়ে চুলায় সিদ্ধ করুন।খেয়াল রাখতে হবে যেন চাল বেশী সিদ্ধ বা শক্ত না হয় । প্রায় সিদ্ধ হয়ে এলে পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে চালটা ট্রেতে বা বড় প্লেটে ছড়িয়ে দিন। এখন একটি প্যানে ঘি গরম করে মাঝারি আঁচে গরম মশলাগুলো ভাজুন। ফুটে উঠলে কিশমিশ, বাদাম, চিনি দিন। এখন এতে সিদ্ধ চাল দিয়ে নাড়তে থাকুন।অল্প আঁচে ২০ মিনিট রান্না করুন। চাল একদম সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে বাটিতে নিয়ে কিশমিশ, পেস্তা-বাদাম কুচি ও ছোট লাল-সাদা মিষ্টি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

বেকড চিকেন চিজ পেস্তা

উপকরণ: সেদ্ধ পাস্তা ২০০ গ্রাম, মুরগির বুকের মাংস ৫০০ গ্রাম, রসুন কিমা ১ টেবিল চামচ, চিকেন কিউব ১টি, তরল দুধ ১ কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, মাখন ২ টেবিল চামচ, জলপাই তেল ২ টেবিল চামচ, গোলমরিচগুঁড়া স্বাদমতো, গ্রেট করা মোজারেলা চিজ ২ কাপ, গ্রেট করা পারমিজান চিজ ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: মুরগির বুকের মাংস হাড় ছাড়িয়ে কিউব করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। একটা প্যানে জলপাই তেল গরম করে তাতে রসুন, কিমা দিয়ে দিন। অল্প ভেজে তাতে কিউব করে কেটে রাখা মুরগির মাংস, চিকেন কিউব আর গোলমরিচ দিয়ে রান্না করে নিতে হবে। এবার অন্য

আরেকটা প্যানে মাখন গরম করে তাতে ময়দা দিয়ে অল্প ভেজে নিন। অল্প অল্প করে তরল দুধ মিশিয়ে সাদা সস তৈরি করে নিতে হবে। এই সসের সঙ্গে দেড় কাপ মোজারেলা চিজ এবং আধা কাপ পারমিজান চিজ মিশিয়ে দিন। চিজ গলে গেলে তাতে রান্না করে রাখা মুরগি আর সেদ্ধ পাস্তা হালকা হাতে মিশিয়ে লবণ ও ঝাল দেখে নিন। প্রয়োজন হলে স্বাদমতো লবণ আর গোলমরিচগুঁড়া মিশিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর একটা ওভেন প্রুফ ক্যাসারোলে রান্না করা পাস্তা নামিয়ে ওপরে বাকি মোজারেলা ও পারমিজান চিজ ছড়িয়ে দিয়ে ২০০ ডিগ্রিতে প্রি-হিটেড ওভেনে ২০-২৫ মিনিট বেক করে নামিয়ে নিতে হবে। ওভেন ভেদে সময়ের তারতম্য হতে পারে। চিজ গলে ওপরে সুন্দর সোনালি রং হলে নামিয়ে নিয়ে গরম পরিবেশন করতে হবে।

লাচ্ছা পরোটা

উপকরণ: ময়দা ২ কাপ, ডিম ১টা, লবণ ১ চিমটি, চিনি ১ চা-চামচ, তরল দুধ এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ, তেল প্রয়োজনমতো (রুটির ভেতরে দেওয়ার জন্য) ও ঘি প্রয়োজনমতো (ময়ান ও ভাজার জন্য)।

প্রণালি: ময়দা, লবণ, চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। আলাদা একটা বাটিতে ডিম আর তরল দুধ ভালোমতো ফেটিয়ে নিতে হবে। এরপর এই দুধ-ডিমের মিশ্রণ ময়দায় একটু একটু করে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে নিতে হবে। তারপর এতে প্রয়োজনমতো ঘি মিশিয়ে ভালো করে ময়ান দিয়ে নিতে হবে।

মাখানো হয়ে গেলে ভেজা কাপড় বা প্লাস্টিক র‍্যাপ দিয়ে ঢেকে রেখে দিন আধা ঘণ্টা। এরপর মণ্ড থেকে লেচি কেটে নিন। তেল মাখিয়ে পাতলা করে রুটি বেলে নিতে হবে। তারপর রুটির ওপরে গলানো ঘি মাখিয়ে ওপরে অল্প করে শুকনা ময়দা ছড়িয়ে দিন। ধারালো ছুরি দিয়ে চিকন করে কেটে নিন। এক পাশ থেকে ধীরে ধীরে বটে দড়ির মতো লম্বা করে পাকিয়ে নিন। আবারও একটু তেল মাখিয়ে গোল করে পেঁচিয়ে নিতে হবে। অল্প তেল মেখে রেখে দিন। এভাবে সব পরোটার লেচি তৈরি হয়ে গেলে ঢেকে আধা ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। তারপর আবারও হাতে তেল মেখে হাত দিয়ে চেপে চেপে পরোটা তৈরি করে নিতে হবে। বেলন দিয়ে বেলেও পরোটা বানানো যায়, কিন্তু সে ক্ষেত্রে পরোটার পরত অত ভালোভাবে বোঝা যাবে না। একটা একটা পরোটা বানিয়ে ভেজে নিন। চুলায় তাওয়া গরম করে আগে ঘি ছাড়া হালকা ভেজে নিতে হবে। তারপর ঘি দিয়ে লালচে করে ভেজে নিন। সব পরোটা বানানো হয়ে গেলে একসঙ্গে রেখে হাত দিয়ে চারপাশ থেকে হালকা করে চাপ

গরুর মাংসের শুকনা ভুনা

উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা দেড় চা-চামচ, মরিচগুঁড়া স্বাদমতো, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, কাশ্মীরি মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, আস্ত গরমমসলা এলাচ/লবঙ্গ/দারুচিনি প্রতিটি ২টা করে, তেজপাতা ২টি, গরমমসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল আধা কাপ।

প্রণালি: গরুর মাংস ছোট করে কেটে আদা-রসুনবাটা, হলুদ-মরিচগুঁড়া, আস্ত গরমমসলা, তেজপাতা, স্বাদমতো লবণ দিয়ে ১ টেবিল চামচ তেলে ভালো করে কষিয়ে গরম পানি দিয়ে মাংস সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করে ঝোল শুকিয়ে ফেলতে হবে। তারপর অন্য একটা প্যানে বা কড়াইয়ে বাকি তেল দিয়ে গরম করে নিন। তাতে পেঁয়াজকুচি দিয়ে বেরেস্তা করে কাশ্মীরি মরিচগুঁড়া, গরমমসলার গুঁড়া আর অল্প পানির ছিটা দিয়ে মাংস শুকনা করে রান্না করতে হবে। পরোটা বা পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

অর্থসূচক/এসএ/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.