কেন তালেবানের সাথে বন্ধুত্বে আগ্রহী চীন?

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে তালেবান। দেশটির ৮৫ শতাংশ নিজেদের দখলে নেওয়ার দাবি করছে সংগঠনটি। যে গতিতে তালেবান আফগানিস্তানের অধিকাংশ জায়গায় নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে চলেছে তাতে কাবুল দখলে নিতে সংগঠনটির খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আর এর ফলেই আফগানিস্তান নিয়ে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর রাজনীতির মেরুকরণ হঠাৎই যেন ইউটার্ন নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে তালেবানদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় নাম এসেছে চীনেরও।

তবে এক্ষেত্রে একদিকে রয়েছে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রায় ১০ লাখের বেশি মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ, অন্যদিকে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম গোড়া ইসলামি সংগঠন। এই বৈপরিত্যের মধ্যে সাময়িকভাবে হলেও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি আর তালেবান খুব শিগগিরিই একসঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছে বলে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, পুরোপুরি ক্ষমতা দখলের পর নিজেদের ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনাও ঠিক করে নিয়েছে তালেবান। চলতি সপ্তাহের শুরুতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে চীনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হবে বলে হংকং ভিত্তিক চায়না মর্নিং পোস্টকে জানিয়েছেন তালেবানের মুখপাত্র।

তবে চীনা সরকারের মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে তালেবানকে সহযোগিতা করার বিষয়টি প্রথমে অসম্ভব মনে হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

বেইজিংয়ের দীর্ঘমেয়াদী আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। চলতি বছরের মে মাসেই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের সাথে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) সম্প্রসারণের জন্য ইসলামাবাদ ও কাবুলের সঙ্গে আলোচনা করেছে চীন। এমনকি তিন দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

চীন তালেবানের ব্যাপারে একেবারে বিরূপও নয়। ২০১৯ সালে বেইজিংয়ে শান্তি আলোচনায় সংগঠনটিকে স্বাগতও জানিয়েছিল চীন।

এদিকে, চীনের জিনজিংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর সরকারের নিপীড়নের পরও দেশটির বন্ধু হতে মরিয়া ইসলামি সংগঠন তালেবান। চলতি মাসের শুরুতে তালেবানের এক মুখপাত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছিলেন, মুসলমানদের উপর অত্যাচারের ব্যাপারে অবশ্যই আমরা চিন্তিত। তবে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমরা হস্তক্ষেপ করবো না।

অন্যদিকে, চীনের প্রতি তালেবানের মনোভাবের ব্যাপারে পাকিস্তানের আইন প্রণেতা পাকিস্তান-চীন ইনস্টিটিউটের প্রধান মুশাহিদ হুসাইন বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে তালেবান বর্তমানে অনেক বেশি ‘নমনীয় আর বাস্তববাদী’। ইসলামপন্থী সংগঠনটি চীনকে আফগানিস্তানের জন্য ‘বিশ্বাসযোগ্য স্টেকহোল্ডার’ হিসেবে দেখছে। ক্ষমতায় গেলে আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা স্থাপন এবং পুনর্গঠনে তালেবানের চীনের সহযোগিতা দরকার হবে। চীনের বিরাগভাজন হওয়া তালেবানের জন্য সুফল বয়ে আনবে না বলেও জানান মুশাহিদ।

আর এ কারণেই চীন আর তালেবান-দুই বিরপীত মেরু বিরল বন্ধুত্বের মাধ্যমে কাছাকাছি আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: সিএনএন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.