মেসি জাদুতে ইকুয়েডরকে উড়িয়ে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা

লিওনেল মেসির অসাধারণ পারফরম্যান্সে ইকুয়েডরকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল আর্জেন্টিনা। লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা ৩-০ ব্যবধানের জয় তুলে নিয়েছে।

দলের হয়ে একটি করে গোল করেন রদ্রিগো দে পল, লাওতারো মার্তিনেস ও মেসি। নিজে গোল করার পাশাপাশি অপর দুই গোলেও অবদান রাখেন মেসি।

আজ রোববার (০৪ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকালে স্তাদিও অলিম্পিকো পেদ্রো লুদোভিকোতে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুদল।

তবে ম্যাচের শুরুটা ছিল মেসির জন্য হতাশাময়। ম্যাচের বয়স তখন ২২ মিনিট। গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তবে প্রথমার্ধেই ভুলের মাশুল দিয়েছেন তিনি, সহায়তা করেছেন রদ্রিগো ডি পলের গোলে।

পরে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ৮৪ মিনিটের সময় মেসির পাস থেকেই দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন লাউতারো মার্টিনেজ। আর শেষ বাঁশি বাজার কয়েক মিনিট আগে দর্শনীয় এক ফ্রি-কিকে ইকুয়েডরের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন আর্জেন্টাইন জাদুকর।

বলিভিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচ থেকে ৭টি পরিবর্তন নিয়ে এ ম্যাচের একাদশ সাজিয়েছেন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি। গোলবারের নিচে ফিরেছেন প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আক্রমণে মেসির দুইপাশে ফেরানো হয়েছে লাউতারো মার্টিনেজ এবং নিকোলাস গনজালেজকে।

অবশ্য প্রথমার্ধে তেমন কোনো পরীক্ষাই দিতে হয়নি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষককে। কেননা পুরো ৪৫ মিনিটে একটি শটও লক্ষ্য বরাবর করতে পারেনি ইকুয়েডর। অন্যদিকে ঠিক বিপরীত চিত্র ইকুয়েডের গোলরক্ষক হার্নান গালিন্দেজের। আর্জেন্টিনার অন্তত ৪টি প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দিলেও, ৪০ মিনিটের সময় আর পারেননি আটকে রাখতে।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে প্রথমবার আর্জেন্টিনাকে হতাশ করেন গালিন্দেজ। ইকুয়েডরের ডি-বক্সের ডান দিক দিয়ে লাউতারো মার্টিনেজকে দারুণ এক পাস এগিয়ে দিয়েছিলেন মিডফিল্ডার লেয়ান্দ্র পারেদেস। কাছের পোস্ট দিয়ে শট নেন লাউতারো। কিন্তু সেটি ফিরিয়ে দেন ইকুয়েডর গোলরক্ষক।

সেই যে ২ মিনিট থেকে শুরু, একের পর এক আর্জেন্টাইন আক্রমণ সইতে হয়েছে ইকুয়েডরের রক্ষণভাগকে। ম্যাচের ১৪ মিনিটের মাথায় জার্মান পেজ্জেল্লার পাস থেকে পাওয়া বলে ইকুয়েডরের রক্ষণ ভাঙেন লাউতারো, গোলরক্ষককে পরাস্ত করে শট নেন গোলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেটি হেড দিয়ে ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার রবার্ট আরবোলেদা।

দুই মিনিট পর আরবোলেদাকে পরাস্ত করেন মেসি। কিন্তু তার শট ব্লক করেন আরেক ডিফেন্ডার পারভিস এস্তুপিনান। ফিরতি বলে শট নিয়েছিলেন লাউতারো। তবে সেটি পিয়েরো হিনকাপির গায়ে লেগে চলে যায় কর্নারে।

মেসির নেওয়া সেই কর্নার থেকে বুক দিয়ে বল নামিয়ে ফাঁকায় থাকা গনজালেজকে দিয়েছিলেন পেজ্জেল্লা। কিন্তু এ তরুণ ফরোয়ার্ড বল মেরে বসেন সাইড নেটে। ফলে গোল পাওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার। এ মিনিটখানেক পর গনজালেজকে ফাউল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন অ্যাঞ্জেলো প্রেসিয়াদো।

শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকা মেসির সামনে সহজতম সুযোগটি আসে ম্যাচের ২২ মিনিটে গিয়ে। ইকুয়েডরের কার্লোস গ্রুয়েজো ব্যাক পাস দিয়েছিলেন গোলরক্ষককে, মাঝপথে সেটি পেয়ে যান মেসি। শুধুমাত্র গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারলেই মিলতো গোল। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে ডানপাশের বারে মারেন মেসি।

এই গোল মিসের হতাশা নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করার পথে ছিল আর্জেন্টিনা। তবে বিরতির বাঁশি বাজার আগে মেসিই এনে দেন উদযাপনের উপলক্ষ্য। ইকুয়েডর রক্ষণকে পরাস্ত করে প্রথমে লাউতারোর উদ্দেশ্যে দুর্দান্ত এক পাস দিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু ডি-বক্স থেকে বেরিয়ে সেই বলটি ক্লিয়ার করেন ইকুয়েডর গোলরক্ষক।

তবে ফিরতি বল পেয়ে যান মেসি। এবার ডি-বক্সের বাম পাশ থেকে নিচু ক্রস এগিয়ে দেন ফাঁকায় দাঁড়ানো রদ্রিগো ডি পলের উদ্দেশ্যে। গোল লাইনে দাঁড়ানো দুই ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে ম্যাচের প্রথম সাফল্য নিজের নামে করে নেন ডি পল। যা তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল।

বিরতিতে যাওয়ার আগে আরও একটি সহজ সুযোগ এসেছিল আর্জেন্টিনার সামনে। ম্যাচের ৪৫ মিনিটের মাথায় মেসির ফ্রি-কিক থেকে হেড করেন নিকোলাস গনজালেজ। সেটি ঠেকিয়ে দেন গালিন্দেজ। তবে ফিরতি বলে আরও সহজ সুযোগ পান গনজালেজ। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হন গোলে পরিণত করতে।

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে নিজেদের খানিকটা গুছিয়ে নেয় ইকুয়েডর, মনোযোগ দেয় বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার দিকে। প্রথমার্ধে তারা লক্ষ্য বরাবর কোনো শট নিতে না পারলেও, দ্বিতীয়ার্ধে দুইটি শট করে আর্জেন্টিনার জাল বরাবর। কিন্তু একবারও পারেনি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে।

অন্যদিকে আক্রমণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে আর্জেন্টিনা। কিন্তু নিকোলাস গনজালেজের আরও একবার ব্যর্থতার কারণে ম্যাচের ৫০ মিনিটের সময় দ্বিতীয় গোল পাওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার। অবশ্য সুযোগ পেয়েছিলেন লাউতারো-মেসিরাও। তারাও কাজে লাগাতে পারেননি।

শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৮৪ মিনিটে গিয়ে ফুরোয় অপেক্ষা। ইকুয়েডরের রক্ষণভাগে দারুণ নৈপুণ্যে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন বদলি হিসেবে নামা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। তিনি বল এগিয়ে দেন মেসির উদ্দেশ্যে। সময় নষ্ট না করে ডি-বক্সে অপেক্ষায় থাকা লাউতারোকে পাস দেন মেসি। জোরালো শটে জাল কাঁপান লাউতারো।

এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার ঠিক আগে ডি মারিয়াকে ফাউল করেন হিনকাপি। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারির সহায়তা নিয়ে জানা যায় ফাউলটি ছিল ডি-বক্সের ঠিক বাইরে। তাই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বদলে দেয়া হয় ফ্রি-কিক এবং হলুদের বদলে লাল কার্ড দেখেন হিনকাপি।

ডি-বক্সের ঠিক দাগের ওপর থেকে নেওয়া বাঁকানো ফ্রি-কিকে ইকুয়েডরের গোলরক্ষককে কোনো সুযোগই দেননি মেসি। স্কোরলাইন হয়ে যায় ৩-০, নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার জয়।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.