অর্থনীতির পুন:রুদ্ধারে ঘাটতি বাজেটের বিকল্প নেইঃ পরিকল্পনা মন্ত্রী  

পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নান এমপি বলেছেন, করোনা ভাইরাসজনিত সংকটে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ঘাটতি বাজেটের কোনো বিকল্প নেই। এই ঘাটতি মোকাবেলার সক্শতা বাংলাদেশের আছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুন) কোভিড কালীন সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: বাজেটের ভূমিকা শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইন্সিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) এবং স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স (এসবিই) যৌথভাবে এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী আবদুল মান্নান বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য ঘাটতি বাজেটের বিকল্প নেই এবং কয়েক বছর ধরেই ঘাটতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ তার সক্ষমতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন “আমি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি এবং এটি আরও উন্মুক্ত হবে”।

তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে আমলাতন্ত্রের মধ্যে দুর্নীতির বিষয়টি এখনও রয়েছে। তবে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় রয়েছে এবং তিনি আমলাতন্ত্রে সংস্কার আনতে কাজ করছেন।

তিনি ভূমির সঠিক বন্টনের জন্য দেশের ভূমি ব্যবস্থার সংস্কারের উপর জোর দিয়েছেন।

ওয়েবিনারের বিশেষ অতিথি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ কাশেম বলেন, আমলাদের অদক্ষতা ও সহজাত দুর্নীতির বিষয়ে সবার খোলামেলা কথা বলা উচিত এবং আমলাতন্ত্র সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছারও প্রয়োজন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।

ওয়েবিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,  বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বাজেটে জোর দেওয়া উচিত ছিল। কারণ কেবল কর ছাড় বিদেশী বিনিয়োগকে উদ্বুদ্ধ করবে না। তিনি সামগ্রিক চাহিদা বাড়ানোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় বাড়ানোর দাবি করেছেন যাতে উত্পাদন এবং কর্মসংস্থান বাড়বে।

এনএসইউ’র অর্থনীতির অধ্যাপক ড. হেলাল আহেমদ বলেছেন যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের উচ্চহারে ঋণ গ্রহণ অর্থনীতির জন্য একধরণের ক্ষতির কারণ। এটি কৃত্রিমভাবে অর্থ সরবরাহ বাড়ায় ফলে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করে এবং প্রাইভেট বিনিয়োগের জন্য ঋণের গ্রহনের সুযোগ কমিয়ে দেয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে দিন শেষে এই সমস্ত সরকারী ঋণ করদাতাদেরকেই প্রদান করতে হবে!

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ২০২১-২২-এর বাজেটে সরকার স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে তবে তা পর্যাপ্ত নয়। তিনি আরও বলেছেন যে বরাদ্দকৃত তহবিলের সময়োপযোগী ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বাজেট বাস্তবায়নের দিকে আরও নজর দেওয়া উচিত।

এসআইপিজির অধ্যাপক ও উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান বাজেট বাস্তবায়নে আমলাদের অদক্ষতাগুলিকে তুলে ধরেন এবং বলেন যে “আমলারা অনিশ্চয়তা পরিহার সিনড্রোমে ভুগছে এবং কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিই এই পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ২০২১-২২ জাতীয় বাজেটকে ব্যবসায়বান্ধব বাজেট হিসাবে সম্বোধন করেছেন। তবে তিনি মনে করছেন এটি কেবলমাত্র বাজারের সরবরাহের দিকটিকেই গুরত্ব দিয়েছে। চাহিদার দিকটি উৎসাহিত করার জন্য নগদ স্থানান্তর বা কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের উচিত পুরানো ও নতুন দরিদ্রের হাতে অর্থ সরবরাহ করা। তিনি সুপারিশ করেছেন, যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মুনাফার উপর ১৫% ভ্যাট অপসারণ করা উচিত কারণ সংজ্ঞা অনুসারে এগুলি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।

এনএসইউ’র ফিন্যান্সের অধ্যাপক ড. শরীফ নুরুল আহকাম, নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এবং কর রিটার্ন দাখিলের মধ্যে থাকা ব্যবধানের দিকটি উল্লেখ করেছেন এবং করের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলেও মনে করেন। তিনি ডাটাবেস উন্নয়নে প্রযুক্তির উপর জোর দিয়েছেন।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.