‘মার্জিন ঋণ বিনিয়োগের ঝুঁকি বাড়ায়’

মার্জিন ঋণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক বিনিয়োগকারী না বুঝে লোভে পড়ে মার্জিন ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই মার্জিন ঋণ নেওয়ার আগে ভাল করে ভেবেচিন্তে নিতে হবে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বালাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কমিশনার অধ্যাপক ডঃ শামসুদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেছেন।

আজ রোববার (৬ জুন) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।

ড. শামসুদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজারে ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনই রিটার্নের (মুনাফা) সুযোগও অনেক বেশি। জেনেবুঝে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি অনেক কমে আসে। মুনাফার সুযোগ বাড়ে।

তিনি বলেন, ব্যাংকের আমানত ও সঞ্চপত্রের চেয়ে পুঁজিবাজারে রিটার্নের সম্ভাবনা বেশি। বিনিয়োগের জন্য তাই পুঁজিবাজার সবচেয়ে ভাল একটা বিকল্প।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) যৌথ উদ্যোগে আলোচিত কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মলালায় প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলম ও পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমান।

অনুষ্ঠানে ডঃ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল ৮ মিলিয়ন ডলার যা এখন ৩৩২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের এ এক বিশাল অর্জন। এই অর্জনের ভিত্তি প্রতিথ হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে যার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষা। আমাদের সর্বদাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনাতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি এবং তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করছি। ১৯৭২ সালে পার ক্যাপিটা জিডিপি ছিল মাত্র ৯৭ ইউএস ডলার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মাত্র তিন বছরে ১৯৭৫-এ উন্নীত করেছেন ২৭৩ ইউএস ডলারে। এর পরে আমাদের অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। এখন আমাদের পার কাপিটা জিডিপি ২২২৭ ডলার। বিশাল অর্জন। আমরা আখন আর তলাবিহিন ঝুড়ি অর্থনীতিতে নেই, বরং আমরা এখন অনেক দেশকে অর্থ ধার/বিনিয়োগ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি। ৫০ বছরে অর্জন কম নয় । জাতির জনকের সোনার বাংলা বিনির্মাণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, কাজের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নাই। যত প্রশিক্ষণ নিবেন তত নিজের মধ্যকার যোগ্যতা, দক্ষতা সুদৃঢ় হবে। বিএসইসি এ ক্ষেত্রে তাদের অবিরাম কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছে। বিএসইসি এর নিয়ন্ত্রিত  বিশেষায়িত দুটি প্রতিষ্ঠান বিআইসিএম, বিএসএএম এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। একই সাথে সিএসই এবং ডিএসই ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখছে । বিএসইসি এই করনাকালিন সময়ে অনলাইন, অফলাইন এর মাধ্যমে  প্রশিক্ষন দিচ্ছে এবং অব্যাহত রাখবে। সামনে পুঁজিবাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সে এর জন্য প্রশিক্ষনকে বাদ্ধতামুলক করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মামুন-উর-রশিদ বলেন, বর্তমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতেও ক্যাপিটাল মার্কেটের ডেভেলপমেন্টের জন্য আমরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সেমিনার এর আয়োজন করে যাচ্ছি । ২০১৭ সাল থেকে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের আয়োজন করা হচ্ছে, যা সাধারণত অক্টোবর এর প্রথম সপ্তাহে সংঘটিত হয়। বিনিয়োগ শিক্ষা হল, ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞান। সঠিক বিনিয়োগ শিক্ষার ফলে আর্থিক জালিয়াতি থেকে রক্ষা পাওয়া এবং সুরক্ষিত আর্থিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দ্বৈত সুবিধা পাওয়া যায়। বিনিয়োগ শিক্ষা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন বিনিয়োগ পণ্যের উপযুক্ততা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান প্রদান করে, তাদেরকে সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

প্রথম দিনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিএসই এর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে উন্নিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদের প্রয়োজন অত্যন্ত দক্ষ ও বলিষ্ঠ শক্তিশালী পুঁজিবাজার। সামনে সব ধরনের বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগের সিংহভাগ উৎস পুঁজিবাজার হতে হবে। আমাদের বর্তমান জিডিপি ১২% ,সেই জিডিপির তুলনায় যে মার্কেট ক্যাপিটার অনুপাত তা বিশ্ব বেঞ্চমার্কের তুলনায় বেশ দুর্বল এবং আমরা আশানুরূপ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। এখানে উল্লেখ্য, এখনও প্রাইভেট সেক্টর এর ইনভেস্টমেন্ট এর উৎস হচ্ছে ব্যাংক, যেখানে মূল উৎস হওয়া উচিত ছিল পুঁজিবাজার। ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারকে উৎসে পরিণত করার জন্য কাজ করে যেতে হবে, বিশেষ করে ব্যাক্তি খাতে বিনিয়োগ,অবকাঠামোগত বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে। চট্টগ্রামেই অনেক কাজ হচ্ছে , শিল্পাঞ্চল হচ্ছে, নতুন নতুন ইনভেস্টমেন্ট এর খাত তৈরি হচ্ছে, আরও হবে, আমরা আশা করছি সামনে এই কাজগুলোর জন্য বিনিয়োগের প্রধান উৎস হবে পুঁজিবাজার।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.