করোনার ভারতীয় ধরনে ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা কম: গবেষণা

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আতঙ্ক জাগাচ্ছে ভারতীয় ধরন। সবশেষ তথ্যমতে বাংলাদেশে নতুন আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত। এ অবস্থায় নতুন এক গবেষণার ফলাফল এ আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসের ভারতীয় বা ডেল্টা ধরনে ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা কম।

ফাইজার–বায়োএনটেকের টিকা নেওয়া ব্যক্তির দেহে করোনা ভাইরাসের মূল ধরনের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তার তুলনায় ভাইরাসটির ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির মাত্রা পাঁচ ভাগের এক ভাগের কম হয়।

বিশ্বখ্যাত ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, টিকা গ্রহণের ফলে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা দেহে করোনা ভাইরাস ঢুকলে ওই ভাইরাসকে শনাক্ত করে নিষ্ক্রিয় করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, টিকাগ্রহীতাদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফাইজারের টিকা থেকে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির এই কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেও তার কার্যক্ষমতা কমে যায়। এসব পর্যবেক্ষণ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সুরক্ষায় বুস্টার ডোজ দেওয়ার পক্ষের যুক্তিকে জোরালো করছে।

গবেষণার এই ফল যুক্তরাজ্যে টিকার দুই ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনার বর্তমান পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে। যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি দেখতে পেয়েছে, ফাইজারের টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে আগে যুক্তরাজ্যের কেন্টে প্রথম দেখা দেওয়া করোনা ভাইরাসের বি. ১.১.৭ (আলফা) ধরনের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, ডেল্টা ধরন বি.১.৬১৭.২ (ভারতীয় ধরন) এর বিরুদ্ধে সেই মাত্রায় হচ্ছে না। এর ভিত্তিতে তারা টিকার দুই ডোজ দেওয়ার সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। গবেষকেরা বলছেন, শুধু অ্যান্টিবডির মাত্রাই টিকার কার্যকারিতার প্রমাণ দেয় না। এ বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার। করোনা ভাইরাস নিষ্ক্রিয়কারী অ্যান্টিবডির স্বল্প মাত্রাই কোভিড–১৯–এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।

গবেষণায় ফাইজারের টিকার দুই ডোজ নেওয়া ২৫০ জন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়। এই ব্যক্তিদের টিকার দুই ডোজ গ্রহণের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল তিন মাস পর্যন্ত।

গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের দুই ডোজ টিকাগ্রহীতাদের রক্তে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডির মাত্রা ভাইরাসের মূল ধরনের তুলনায় বি.১.৬১৭.২ ধরনের ক্ষেত্রে পাঁচ ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম। যারা মাত্র এক ডোজ নিয়েছেন, তাদের অ্যান্টিবডি রেসপন্স আরও কম।

ফাইজারের টিকার এক ডোজ নেওয়ার পর ৭৯ শতাংশ মানুষের শরীরে ভাইরাসটির মূল ধরনের বিরুদ্ধে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি রেসপন্স দেখা যায়। সেখানে বি.১.১.৭ ধরনের বিরুদ্ধে তা নেমে আসে ৫০ শতাংশে, বি.১.৬১৭.২ ধরনের বিরুদ্ধে তা কমে আসে ৩২ শতাংশে এবং বি.১.৩৫১ বা বেটা ভেরিয়েন্টের (দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম দেখা দেয়) ক্ষেত্রে তা নেমে আসে ২৫ শতাংশে।

প্রতিটি ধরনের ক্ষেত্রেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডির মাত্রা কম হলেও নারী–পুরুষ বা শরীরের ওজনভেদে কোনো তারতম্য দেখা যায়নি।

সূত্র: এনডিটিভি।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.