ফিলিস্তিনিদের এই দুঃসময়ে বিএনপি সমব্যথী: ফখরুল

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলাকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ রোববার (১৬ মে) দলটির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমি মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল আকসা মসজিদসহ গাজা এবং অন্যান্য এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ বোমা হামলা ও নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নিহতদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। ইসরায়েলের এই বর্বরোচিত হামলা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের অনুভূতিতে চরম আঘাত হেনেছে। শুধু মুসলমান নয়, মানবিক বিবেকসম্পন্ন যেকোনো ধর্মের মানুষের মনে এই অমানবিক হামলা তাদের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। এই হামলা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। ফিলিস্তিনিদের এই দুঃসময়ে তাদের বেদনার্ত জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ ও বিএনপিও সমব্যথী ও ক্ষুব্ধ।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারি করোনার এই কঠিন সময়ে পবিত্র রমজানে শবে কদর, জুমাতুল বিদা ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনসহ এখনো ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ও নৃশংস হামলা মানবতার বিরুদ্ধে এক জঘন্যতম অপরাধ। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী চলমান বর্বরতার আরেকটি ঘৃন্যতম উদাহরণ হয়ে থাকবে। ইসরায়েলের সর্বগ্রাসী এই হামলায় ফিলিস্তিন আজ এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। শরণার্থী শিবির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আল জাজিরা, এপিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কার্যালয়- কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না এই সর্বগ্রাসী হামলার ছোবল থেকে। রকেট হামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইসরায়েলি সেনাদের নৃশংস হামলার সংবাদ যেন বিশ্ববাসী অবগত হতে না পারে। ইসরায়েলি বাহিনী স্থল ও আকাশ পথে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নারী-শিশু, কিশোর-যুবক, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নির্বিচারে নির্মমভাবে হত্যা করছে। এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসী স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই শোকাবহ ঘটনার সময়ে বাংলাদেশের জনগণ এবং বিএনপি ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করছে। বিএনপি ও বাংলাদেশের জনগণ প্রথম থেকেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দিয়ে আসছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে সবসময় সোচ্চার ছিলেন এবং এখনো বিএনপি সেই নীতিতে অটল আছে। ইসরায়েলি বাহিনীর এই অমানবিক হামলা ও হত্যাযজ্ঞ ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য ও জন্মগত অধিকার। তাদের এই অধিকার হরণের ধৃষ্টতা কোনোভাবেই সহ্য করবে না বিবেকবান মানুষ ও বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়। এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর ইস্পাত কঠিন ঐক্য এখন সময়ের দাবি। ঐক্যবদ্ধ মুসলিম উম্মাহকে আন্তর্জাতিক ফোরামে এক ও অভিন্ন ভাষায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের হামলার বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা, হত্যা, নির্যাতন এবং তাদের জমি ও বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদসহ বিভিন্ন স্থাপনা দখল ইসরায়েলিদের নিয়মিত কর্মে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এই হামলার নিন্দা জানালেও তা যথেষ্ট নয় বলে বিএনপি মনে করে। ইসরায়েলকে এ ধরনের হামলা, নৃশংসতা ও উসকানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত রাখাসহ ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্ব থেকে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাস্তবসম্মত স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা জাতিসংঘ, ওআইসি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি ইসরায়েলিদের বোমা হামলায় নিরপরাধ অসংখ্য ফিলিস্তিনিদের হতাহত ও আল জাজিরা, এপিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের ব্যুরো কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের ঘটনায় নিন্দা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাদের শোকাহত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.