নামের মিলে সাজাভোগ, হাসিনা বেগমকে মুক্তির আদেশ

নামের মিলের কারণে চট্টগ্রাম কারাগারে সাজাভোগকারী হাসিনা বেগমকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন আদালত। নামের আংশিক মিল থাকায় পুলিশের ভুলে হাসিনা আক্তার নামে এক নারীর সাজাভোগ করছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার (০৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ (চতুর্থ) আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞার ভার্চুয়াল আদালত এ আদেশ দেন।

হাসিনা বেগমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ গণমাধ্যমকে বলেন, নামের আংশিক মিলে দীর্ঘ প্রায় এক বছর পাঁচ মাস হাসিনা আক্তারের সাজা ভোগ করেছেন হাসিনা বেগম। হাসিনা বেগম বর্তমানে কারাগারে বেশ অসুস্থ। তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিষয়টি আমি নজরে আনার পর আদালত টেকনাফ থানা ও কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। যাদের ভুলে তিনি এই অন্যায় সাজা ভোগ করেছেন আমি তাদের শাস্তির জন্যও আদালতে আবেদন করবো।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ মাস আগে হাসিনা বেগমের বিষয়টি চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত পঞ্চম আদালতের নজরে আনেন অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ। আদালত বিষয়টি কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।

কিন্তু একের পর এক ধার্য তারিখ পেরিয়ে গেলে পুলিশ প্রতিবেদনটি দাখিল করতে বিলম্ব করছিল। একপর্যায়ে আদালত গত ২২ মার্চ পরের ৮ এপ্রিলের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশকে আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে টেকনাফ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) খোরশেদ আলম বিষয়টি তদন্ত করে ৬ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, হাসিনা বেগম ও হাসিনা আক্তারের নাম-ঠিকানা একই পাওয়া যায়। তবে পূর্বে গ্রেফতার হওয়া হাসিনা আক্তারের দুই সন্তান ছিল এবং বর্তমানে কারাগারে থাকা হাসিনা বেগম তিন সন্তানের জননী। তাদের বয়স ও ছবির পার্থক্য এবং উভয়ের স্বামীর পিতা-মাতার নামে কোনো মিল নেই।

পুলিশ প্রতিবেদনসহ রোববার (০২ মে) বিষয়টি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞার ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি হয়। সেদিন শুনানি শেষে আদালত চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে কারাগারের ছবিযুক্ত নথি দেখে আরেকটি প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।

আদালতের আদেশে কারা কর্তৃপক্ষ আজ (মঙ্গলবার) প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদনেও হাসিনা আক্তার ও হাসিনা বেগম ভিন্ন এবং তাদের ছবি মিল নেই বলে উল্লেখ করা হয়। কারাগারের প্রতিবেদন ও পুলিশের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে হাসিনা বেগমকে আজ মুক্তির আদেশ দেন আদালত।

আদলত সূত্রে জানা আরও জানা গেছে, দুই সন্তানসহ হাসিনা আক্তার নামে এক নারী ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী থানার মাদক মামলায় কারাগারে যান। একই বছর ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি।

এরপর ২০১৯ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর পঞ্চম আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী ওই মামলায় হাসিনা আক্তারকে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। এছাড়া জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

রায় ঘোষণার পর ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর টেকনাফ থানা পুলিশ হাসিনা বেগমকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। সেই থেকে নির্দোষ হাসিনা বেগম কারাভোগ করছেন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.