রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৮ বছর, দুই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণই শুরু হয়নি

আট বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার অদূরে সাভারে ঘটে এক মানবিক বিপর্যয়। আটতলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন রানা প্লাজা ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৪ জন পোশাককর্মী। আহত হন আরও প্রায় দুই হাজার। এ ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে দুটি মামলা দায়ের হয়। যদিও মামলার এখনো কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত রানা প্লাজায় তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো ওইদিন সকাল ৮টায় হাজির হন কর্মস্থলে। উৎপাদনও শুরু করেন নির্ধারিত সময়ে। হঠাৎ সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দ। আশপাশে উড়তে থাকে ধুলো-বালি। ধসে পড়ে রানা প্লাজা। শুরু হয় আহত শ্রমিকদের আহাজারি। উদ্ধারে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। চলে বিরতিহীন উদ্ধার অভিযান। থমকে যায় পুরো দেশ।

রানা প্লাজার প্রথম তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান। দ্বিতীয় তলায়ও ছিল দোকান আর ব্যাংক। তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেডে এবং ফ্যানটম ট্যাক লিমিটেড, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ইথারটেক্স লিমিটেড গার্মেন্টস।

রানা প্লাজা ধসে ১১৩৪ জন শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধার কর্মীরা। আর ২৪৩৮ শ্রমিককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন। অনেকে আবার মানসিক রোগী হয়ে আছেন।

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালের ২৪ মে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের সামনে নির্মাণ করেন একটি শহীদ বেদি। অস্থায়ী শহীদ বেদিটির নামকরণ করা হয় ‘প্রতিবাদ-প্রতিরোধ’। এ শহীদ বেদিটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন চালিয়ে আসছে নানা আন্দোলনের কর্মসূচি।

রানা প্লাজার অধিকাংশ ধ্বংসস্তূপই সরিয়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বংশাই নদীর পাড়ে। এখনও কংক্রিটের সুরকি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে রানা প্লাজার ১৮ শতাংশ জমির উপর। চারপাশটা কাটাতার ও টিনের বেড়া দিয়ে রেখেছিল জেলা প্রশাসক। তাও আজ মিশে গেছে। সামনেই বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছে শহীদ বেদি। প্রায় প্রতিদিনই রানা প্লাজায় আহত, নিহত আর নিখোঁজ স্বজনের আনাগোনা চোখে পড়তো। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নানা দাবিতে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে আন্দোলন করেছে।

এদিকে, প্রায় পাঁচ বছর আগে এই দুই মামলার অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন বিচারিক আদালত। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হলো, দুই মামলায় এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্য দিতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে আলোচিত মামলা দুটির বিচারিক কার্যক্রম শুরুর ‘গেরো’ কবে খুলবে, তা নিয়েই প্রশ্ন সচেতন মহলের।

আদালতে যান আটজন আসামি। এদের মধ্যে ছয়জনের আবেদন নিষ্পত্তি হয়। দুই আসামি সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী ও সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাতউল্লাহর পক্ষে করা আবেদনে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তাদের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখনো হত্যা মামলার সাক্ষ্য নিতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। আসামিদের আবেদন নিষ্পত্তির জন্য চারবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ফলে থমকে আছে মানবসৃষ্ট এ হত্যাকাণ্ডের বিচার।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.