বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলে ‘রহস্যময়’ মিথেন গ্যাস

জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশের আকাশে রহস্যময় মিথেন গ্যাসের ধোয়া শনাক্ত হয়েছে। বায়ুমণ্ডলে মিথেনের নিঃসরণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখা বাংলাদেশের ওপর এই গ্যাস শনাক্ত করেছে অন্তত তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা। নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক ও ডেটাসেবা প্রদানকারী এবং মিডিয়া কোম্পানি ব্লুমবার্গ তাদের একটি প্রতিবেদনে এই গ্যাসকে ‘রহস্যময়’ বলে উল্লেখ করেছে।

মিথেন এক ধরনের গ্রিন হাউস গ্যাস— যা বায়ুমণ্ডলে প্রথম দুই দশকে কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ কার্যকর থাকে।

বাংলাদেশের ওপর মিথেন গ্যাস নিঃসরণের সর্বাধিক ১২টি হার শনাক্ত করেছে প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি কেরোস এসএএস। স্যাটেলাইটে ধারণকৃত চিত্র বিশ্লেষণে তারা বাংলাদেশের ওপর মিথেনের এই উপস্থিতি শনাক্ত করেছে বলে জানিয়েছে।

জিএইচসিএসএটি নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট স্টিফেন জার্মেইন জানিয়েছেন, তারাও বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের ধোয়া শনাক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এটি আমাদের দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী টেকসই নির্গমন। এর উৎস সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ডেটা বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুফিল্ড টেকনোলজিসও বাংলাদেশের উপরে এই গ্যাস শনাক্ত করেছে।

কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা যোতম এরিয়েল বলছেন, আমাদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মিথেন নিঃসরণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখা যায়।

বাংলাদেশের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন।

তিনি বলেন, এটি সম্ভবত ধানক্ষেত থেকে আসছে। যখন কৃষকেরা তাদের ক্ষেত সেচের পর ভাসিয়ে দেন, তখন জলাবদ্ধ মাটির ব্যাকটেরিয়া বিপুল পরিমাণ গ্যাস তৈরি করতে পারে। আরেকটা উৎস হচ্ছে ল্যান্ডফিল গ্যাস। আমরা এটি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

যুক্তরাষ্ট্রে গবেষকেরা আগেই সতর্ক করে বলেছেন, মিথেন গ্যাসের ছড়িয়ে পড়ার হার যদি কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা না যায়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করার জন্য বর্তমানে যেসব লড়াই সংগ্রাম চলছে, তাতে খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না।

গৃহপালিত পশু, তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের লিক, ভূমিতে আবদ্ধ গ্যাস এবং কয়লা খনি হলো মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকাণ্ড; যা থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরিত হয়। বর্তমান বিশ্ব উষ্ণায়নের কমপক্ষে এক চতুর্থাংশের জন্য মনুষ্যসৃষ্ট মিথেন নিঃসরণ দায়ী বলে মনে করে এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড।

কেরোস এসএএসের মতে, ধানক্ষেত, মাটিতে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস, প্রাকৃতিক গ্যাসলাইনে লিক এবং কয়লাখনি থেকে বাংলাদেশের মিথেন নিঃসরণ হয় বেশি। কেরোস এসএএস এসব কথা বলতে গিয়ে ইএসএ’র সেন্টিনেল-৫পি এবং সেন্টিনেল-২ স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করেছে।

সূত্র: ব্লুমবার্গ।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.