রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে ডি-৮ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সবাইকে সর্তক করে তিনি বলেন, এই সংকটের সমাধান না হলে এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি এ আহ্বান জানান। সম্মেলনে অন্য ডি-৮ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরাও ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।

সম্মেলনে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে যুবশক্তিকে কাজে লাগানো, তথ্যপ্রযুক্তি সম্ভবনার পূর্ণ ব্যবহার, প্রয়োজনীয় আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত কাঠামো তৈরি, কানেকটিভিটি বাড়ানো, ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ডি-৮ এর চেয়ারম্যানশিপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশ আগামী দুই বছর ডি-৮ এর চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়িক ধারণা, মডেল, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিতে তরুণদের শক্তি ও সম্ভাবনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, বেসরকারি, এমনকী সরকারি থেকে বেসরকারি পর্যায়েও ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের দেশগুলোর (ডি-৮) যুবকদের একত্রিত হতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। ডি-৮ বিজনেস ফোরামের সঙ্গে প্রথম ডি-৮ ইয়ুথ সম্মেলনটি একটি বিরল সুযোগ তৈরি করেছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে কার্যকরী পার্টনারশিপ এবং বৃহত্তর সহযোগিতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুবদের খুব ভালো সম্পৃক্ততা কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও আমাদের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।

গত এক দশকে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির ওপর জোর দিয়েছে এবং দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছে উল্লেখ করেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী।

ডি-৮ সদস্য দেশগুলোকে বাণিজ্য বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডি-৮ সেক্রেটারিয়েট সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ক্ষেত্রে সম্ভাবনার তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এ ধরনের তথ্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আরও বেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করতে সহায়তা করবে।

ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও কার্যকরী এবং টেকসই উন্নয়নে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জলবায়ু ইস্যুতে সহযোগিতা করার করার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এই সমস্যা বাংলাদেশের পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, মানবিক বিবেচনাবোধ থেকে বাংলাদেশ ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুরু থেকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ, সম্মানজনক এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য চেষ্টা করে আসছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন এখনো শুরু হয়নি।

তিনি বলেন, এই সংকটের সমাধান না হলে এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ডি-৮ এর শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেছেন। এটি ডি-৮ এর ১০ম সম্মেলন। বাংলাদেশে এটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) ভার্চুয়ালি বৈঠক শুরু হয়েছে। এবছর শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে অংশীদারিত্ব: যুবশক্তি ও প্রযুক্তির প্রস্তুতি’।

বিকেল ৩টার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন জোটের সদস্য দেশ মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ সিসি, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.