পতনে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

টানা তিন কর্মদিবস সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) নিম্নমুখী প্রবণতায় শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একে স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন হিসেবেই দেখছেন। ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস (দরপতনের সর্বনিম্ন সীমা) প্রত্যাহারের নির্দেশনার কারণে পতনের যে কথা বলা হচ্ছে তা শুধু ‘মনগড়া কথা’ বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

আজ বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৮২ পয়েন্ট। এর আগে গত তিনদিনে ৪ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত সূচক বেড়েছে ২৪৯ পয়েন্ট। রোববার (০৪ এপ্রিল) ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিলো ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্টে। যা বুধবার (০৭ এপ্রিল) বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩৩৭ পয়েন্টে। সপ্তাহ শেষে ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক আজ রয়েছে ৫ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে।

দীর্ঘ সময় ধরে একই দরে আটকে ছিল পুঁজিবাজারের শতাধিক কোম্পানি। এসব কোম্পানির শেয়ারদর মাঝে মাঝে কিছুটা বাড়লেও কমে আবারও আটকে থাকত ফ্লোর প্রাইসে। এর ফলে নির্ধারিত দরের নিচে লেনদেন হওয়ার সুযোগ ছিল না কোম্পানিগুলোর। সর্বশেষ বুধবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়মিত সভায় উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন ৬৬ কোম্পানির সর্বনিম্ন দর। বাকিগুলোর ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা সহসাই উঠছে না।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ অর্থসূচককে বলেন, পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত তৈরি করে ফ্লোর প্রাইস। যে কোম্পানি লেনদেন হওয়ার কথা, সেটি লেনদেন হচ্ছে না। আর হলেও সেই কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে না। এসব কোম্পানির শেয়ার যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে আছে তারা পারছেন না শেয়ার বিক্রি করতে। কারণ যে দরে ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়েছে সে দরে কেউ কিনতে চান না।

তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়ায় সে কোম্পানিগুলোর এখন হয় শেয়ারের দর বাড়বে নাহয় কমবে। বিনিয়োগকারীরা স্বাধীনভাবে তাদের শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। লকডাউনের মধ্যে টানা তিন দিন সূচকের উত্থান হয়েছে। এক-দুই দিন কমবে। এটাই স্বাভাবিক। সূচক পতন হয়েছে বলে যেসব বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে আছেন তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

কেউ কেউ আবার কম সময়ে যা লেনদেন হয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, লকডাউন আবার বাড়াবে কিনা এই ধরনের কিছু প্রশ্নের কারণে এ সপ্তাহে অনেকেই বাজারে আসেননি। তারা আগামী সপ্তাহ থেকে আবার যথারীতি মার্কেটে আসলে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ নিয়ে আতঙ্কিত বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

সূত্রমতে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে ৬৬টি কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। যা গতবছরের ১৯ মার্চ করোনা মহামারির কবলে পতনরোধে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে ৪৪টি কোম্পানি সিকিউরিটিজ ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। যা সহসাই তোলা হবে না বলে বিশ্বস্তসূত্র অর্থসূচককে নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, আজ ডিএসইতে ৪৭৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে আগের দিন থেকে ১০৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা কম লেনদেন হয়েছে। গতকাল লেনদেন হয়েছিল ৫৮২ কোটি ৫২ লাখ টাকার। এদিন ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৮২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ২০ পয়েন্ট কমেছে।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে মোট ৩৪৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭টির, দর কমেছে ২৬৪টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টি কোম্পানির।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২০৩ পয়েন্ট। সূচকটি ১৫ হাজার ২৩১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার।

সিএসইতে মোট ২১৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির, দর কমেছে ১৫৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির।

অর্থসূচক/আরএ/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.