চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন গাইবান্ধা সদরের কাবিলের বাজারে স্বামী-শাশুড়ির দেওয়া আগুনে দগ্ধ সেই গৃহবধূ শারমিন আক্তার (২৭)। শনিবার (২৭ মার্চ) সকালে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২৬ মার্চ) দিনগত রাত ১১টার দিকে মারা যান শারমিন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দুপুরে সদর উপজেলার কাবিলের বাজার এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে শারমিনের শরীরে আগুন দেন স্বামী- শাশুড়ি।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে দগ্ধ শারমিনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
শারমিন গাইবান্ধা সদর উপজেলার কাবিলের বাজার এলাকার কোরবান আলীর স্ত্রী। শারমিনের বাবার বাড়িও একই এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, দুই বছর আগে কাবিলের বাজার এলাকায় ইসমাইল হোসেনের ছেলে কোরবানের সঙ্গে বিয়ে হয় শারমিনের। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকসহ নানা কারণে শারমিনকে নির্যাতন করতেন স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ীর লোকজন।
দগ্ধ অবস্থায় শারমিন জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দুপুরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মারধরের পর তার শরীরে গ্যাস লাইট দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী কোরবান আলী ও শাশুড়ি কুলছুম বেগম।
দিনভর যন্ত্রণায় কাতরালেও তাকে নেওয়া হয়নি হাসপাতালে। যন্ত্রণায় গলা শুকিয়ে এলেও দেওয়া হয়নি এক ফোটা পানি। তাকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘরবন্দি করে রেখে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালান অভিযুক্তরা।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বাবারবাড়ীর লোকজন এসে দিনগত রাত ৯টার দিকে শারমিনকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়। আগুনে গৃহবধূ শারমিনের শরীরের ৮৫ ভাগ দগ্ধ হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শারমিনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে মারা যান শারমিন।
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মজিবর রহমান জানান, এ ঘটনায় শারমিনের বাবা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বুধবার (২৪ মার্চ) দুপুরে কোরবান ও তার মা কুলসুমকে আসামি করে গাইবান্ধায় থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরে অভিযান চালিয়ে কাবিলের বাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে অভিযুক্ত কোরবান আলী (৩০) ও তার মা কুলসুম বেগমকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়।
অর্থসূচক/এমএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.