ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন হ্যারি-মেগান

ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য যা বিরল, অপরাহ উইনফ্রে শো-তে তা-ই করেছেন প্রিন্স হ্যারি এবং ডাচেস অব সাসেক্স মেগান৷ রাজপরিবারের বিষয়ে কথা বলেছেন সরাসরি৷ ভুল সংবাদ পরিবেশনের জন্য ব্রিটিশ মিডিয়ার সমালোচনাও করেছেন তারা৷

ডাচেস অব সাসেক্স মেগানের প্রতি ব্রিটেনের ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর আচরণের সমালোচনা করে ২০২০ সালের ব্রিটিশ রাজপরিবার ছেড়ে স্বাধীন জীবন যাপন শুরু করেন তারা৷ তারপর থেকে নানা কারণে খবরে এলেও রাজপরিবার সম্পর্কে কখনো সরাসরি কথা বলেননি হ্যারি-মেগান৷ তবে গত রবিবার প্রচারিত অপরাহ উইনফ্রো শো-তে অবশেষে চমকে দেয়ার মতো অনেক কথাই বললেন তারা৷

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেসিটো অঞ্চলের বাসিন্দা হ্যারি-মেগান দম্পতি৷ সেই সুবাদে অপরাহ উইনফ্রের প্রতিবেশীও তারা৷ মেঘানকে নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ার লাগাতার খবর পরিবেশনের প্রসঙ্গে উঠে আসে বিয়ের অনুষ্ঠানে ডাচেস অব ক্যামব্রিজ কেট-কে বিয়ের অনুষ্ঠানে কাঁদানোর খবরের বিষয়টি৷ অভিযোগ অস্বীকার করে খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মেগান৷ এ সময় অপরাহ-ও এমন কিছু শিরোনাম পড়ে শোনান যাতে কেট এবং মেগানের বিষয়ে মিডিয়ার ‘দ্বৈত নীতি’ স্পষ্ট৷

তবে সাক্ষাৎকারভিত্তিক টেলিভিশন অনুষ্ঠানটির এবারের পর্বে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে রাজপরিবার সম্পর্কে মেগান আর হ্যারির বক্তব্য৷ এক প্রশ্নের জবাবে মেগান বলেন, রাজ পরিবার আর প্রতিষ্ঠানটিকে (রাজতন্ত্র) যারা চালান, তারা সম্পূর্ণ আলাদা দুটি সত্তা৷ তিনি জানান, তার প্রতি রানির আচরণ সবসময়ই খুব চমৎকার৷ তবে অপরাহ যখন জানতে চান রাজপরিবারে নীরব থাকতেন, নাকি নীরব থাকতে বাধ্য করা হতো, সরাসরি জবাব না দিয়ে মেগান শুধু বলেন, ‘দ্বিতীয়টি৷’ আমাকে আর আমার স্বামীকে রক্ষা করার জন্য সত্যি কথা বলার ইচ্ছা তাদের (রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের) ছিল না৷

এ সময় হ্যারি জানান, রাজপরিবার ছেড়ে আসার পর তার বাবা প্রিন্স চার্লসকে ফোন করলেও তিনি ধরতেন না৷ এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে আর তাই সন্তানের সঙ্গে বাবা ফোন করে আবার কথা বলেন বলেও জানিয়েছেন হ্যারি৷ এসব বিষয়ে হ্যারির অবশ্য কোনো অভিযোগ নেই৷ তিনি মনে করেন, তার বাবা এবং ভাই, অর্থাৎ প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্স উইলিয়াম আসলে ‘জালে আটকে গেছেন’৷

হ্যারি মনে করেন, তার আর মেগানের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে তা দেখলে তার প্রয়াত মা, প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানা ‘খুব রেগে যেতেন, ভীষণ দুঃখ পেতেন৷’ হ্যারি আরও জানান, ২০২০ সালে রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা কমিয়ে দেয়া হয়, তখন শুধু মায়ের উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্য টাকাটাই পেয়েছেন তিনি৷

রাজ পরিবারে বর্ণবাদের বিষয়টিও উঠে আসে মেগানের কথায়৷ ডাচেস অব সাসেক্স জানান, প্রথম সন্তান কতটা কালো হতে পারে এ নিয়ে পরিবারের কেউ কেউ বেশ চিন্তায় ছিলেন৷ তবে তারা কারা তা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি৷ এ সময় অশ্বেতাঙ্গ পারিবারিক অতীতের কারণে ব্রিটিশ মিডিয়ায় তাকে নিয়ে যে ‘বর্ণবাদী প্রতিবেদন’ প্রকাশিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে পরিবারের কেউ কিছু না বলায় হতাশাও ঝরেছে মেগানের কণ্ঠে৷

রাজপরিবারে থাকার সময় ভয়ঙ্কর চাপে মানসিকভাবে প্রায় ভেঙে পড়েছিলেন মেগান৷ সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে জানান, এক সময় আত্মহত্যাই মনে হয়েছিল একমাত্র সমাধান, ‘আমি তখন আর বাঁচতে চাইছিলাম না৷’ অপরাহ উইনফ্রে শো-তে মেগান আরো জানান, তখন মানসিক স্বাস্থ্যের বিপর্যয়ের কথা জানিয়ে রাজপ্রাসাদের সহযোগিতাও চেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু কেউ তার কথায় কান দেয়নি৷ সূত্র: এএফপি, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.