সংশোধিত এডিপি ১৯৭৬৪৩ কোটি, সর্বোচ্চ গুরুত্ব পরিবহন খাতে

দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহের অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাজেট চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৪৯ হাজার ২১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের প্রায় ২৫ শতাংশ।

আজ মঙ্গলবার (০২ মার্চ) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এর অনুমোদন দেওয়া হয়।

সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণখাতে ১৪ হাজার ৯২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মূল এডিপির ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মূলত কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতকে এবারের সংশোধিত এডিপিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন পাওয়া সংশোধিত এডিপির আকার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়ন করা হবে ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

এ বছর এডিপির আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়। তবে, সংশোধিত এডিপি বা চূড়ান্ত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা খাতে কমছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।

সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, সংশোধিত এডিপির জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মোট দুই লাখ তিন হাজার ৮৬৬ কোটি ৭৫ লাখ প্রাথমিক চাহিদা পায় পরিকল্পনা কমিশন। সবকিছু বিবেচনা করে সংশোধিত এডিপির আকার এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, মূল এডিপি ও সংশোধিত এডিপিতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য হ্রাস বা জনগণের জীবনমাত্রার মান উন্নয়ন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উত্তরণকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এডিপি/আরএডিপি প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ বৃদ্ধি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য ঘাটতি পূরণ, সবার জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, নারীর ক্ষমতায়ন, অপরাধ দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সরবরাহ, মানবসম্পদ শিক্ষা ব্যবস্থা (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বৃত্তিমূলক), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মসূচির প্রসার ও উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিপূরক অভ্যন্তরীণ উৎস বরাদ্দের (Matching Fund) প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষিখাতে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা মোট এডিপির ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে ১৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা মোট সংশোধিত এডিপির ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। এছাড়া পানি সম্পদখাতে ৬ হাজার ৭০৯ কোটি ও শিল্পখাতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎখাতে ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা মোট এডিপি ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। শ্রম ও কর্মসংস্থানখাতে ৫৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দেশজ সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো অনলাইন পদ্ধতিতে সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যা বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো। মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ চাহিদা, অর্থ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ এবং সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের বিষয়টি আরএডিপি প্রণয়নে বিবেচনা করা হয়েছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.