বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার, পুলিশের গুলিতে নিহত ১৮

সামরিক অভ্যুত্থানের পর রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন দেখল মিয়ানমার। এদিন বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৮ জন মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অনেকে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতর বিশ্বস্ত তথ্য পেয়েছে যে, পুলিশ ও সামরিক বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রাণঘাতী ও স্বল্প প্রাণঘাতী উপায়ে দমন করেছে, যাতে অন্তত ১৮ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।’

রোববার ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি, স্টান গ্রেনেড ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। বিক্ষোভ দমনে সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয়।

স্থানীয় গণমাধ্যম মিয়ানমার নাউ জানিয়েছে, মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়তে পুলিশের গুলিতে দু’জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। মান্দালয়ের অধিবাসী সাই তুন রয়টার্সকে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে আবারও গুলি চালায়েছে, যাতে এক নারী নিহত হয়েছেন।

সাই তুন বলেন, ‘মেডিকেল টিম তাকে পরীক্ষা করেছে এবং তিনি মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে। তার মাথায় গুলি লেগেছিল।’

ফ্রন্টিয়ার ম্যাগাজিনকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, একটি বাসস্টেশনে আশ্রয় নেয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়েছে পুলিশ।

দক্ষিণাঞ্চলীয় দাওয়েই এলাকার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সেখানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়লে একজন নিহত এবং আরও ডজনখানেক আহত হয়েছেন। কিয়াও মিন হাইক নামের এক রাজনীতিবিদ রয়টার্সকে ওই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ইয়াঙ্গুনের একটি মেডিকেল স্কুলের সামনে পুলিশ স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে স্কুলের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। চিকিৎসকদের জোট ‘হোয়াইটকোট অ্যালাইয়েন্স’ জানিয়েছে, ৫০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ২১ জন বিক্ষোভকারী নিহত হলেন। যদিও গত সপ্তাহে সামরিক জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লেইং বলেছিলেন, প্রশাসন সর্বনিম্ন উপায়ে বিক্ষোভ দমন করছে।

রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল এমআরটিভি জানিয়েছে, শনিবার দেশব্যাপী ৪৭০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার আটকদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির নির্বাচিত সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়। ক্ষমতা দখল করে সামরিক সরকার এনএলডির শীর্ষ নেতা অং সান সু চিসহ প্রেসিডেন্ট ও সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রীদের আটক করে।

অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পর থেকেই দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু করে মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, শিক্ষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ সব স্তরের মানুষ। তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সামরিক জান্তা সরকার।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.