চীনে উইঘুর মুসলিমদের ওপর ‘গণহত্যা’ চলছে: কানাডা

আমেরিকার পর এবার কানাডা। দেশটির পার্লামেন্টে উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে প্রস্তাব পাশ হলো। বলা হলো, উইঘুরদের ‘গণহত্যা’ করছে চীন। যদিও ভোট দেননি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তাঁর ক্যাবিনেটের কোনো মন্ত্রীও ভোট দেননি। তবে শাসকদলের বহু সদস্যই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিরোধীরা সকলে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে সর্বসম্মতিক্রমে পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি পাশ হয়েছে। এর ফলে চীন এবং কানাডার সম্পর্কে চিড় ধরার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের শাসনের একেবারে শেষ পর্যায়ে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বিবৃতি দিয়ে চীনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের গণহত্যা চলছে। এর জন্য চীনকে সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে। বিবৃতি প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীন পম্পেওসহ একাধিক মার্কিন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। বলা হয়েছিল, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার নেই আমেরিকার।

আমেরিকার পরে এবার সেই একই বিষয়ে সরব হলো কানাডা। সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে এ বিষয়ে প্রস্তাব আনা হয়। বিরোধীরা সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। শাসক দলেরও বহু সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। ২৬৬-০ ভোটে প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে পাশ হয়ে যায়। যদিও প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তাঁর মন্ত্রিসভার কেউ ভোট দেননি। বিপক্ষেও অবশ্য তাঁরা ভোট দেননি। ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন।

ট্রুডো এদিন পার্লামেন্টে উপস্থিতই ছিলেন না। মন্ত্রিসভার একজনই সদস্য কেবল পার্লামেন্টে গিয়েছিলেন। তিনি প্রতীকীভাবে পার্লামেন্টে থেকেও ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, মন্ত্রিসভার প্রতিনিধি হিসেবেই তিনি পার্লামেন্টে এসেছিলেন। তাঁর মতই মন্ত্রিসভার অভিমত।

উইঘুর মুসলিমদের উপর চীন অত্যাচার চালাচ্ছে, এই অভিযোগ নয়। একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকাসহ বিশ্বের বহু দেশ এ বিষয়ে একাধিকবার চীনের সমালোচনা করেছে। তবে গণহত্যা শব্দটি আমেরিকার আগে কেউ ব্যবহার করেনি। জাস্টিন ট্রুডো অবশ্য গণহত্যা শব্দটি ব্যবহারের পক্ষে নন। এর আগে চীনের সমালোচনা করলেও, নির্দিষ্ট শব্দটি ব্যবহারে যে তাঁর আপত্তি আছে, পার্লামেন্টে সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিরোধীরা প্রস্তাবটির পক্ষে ছিলেন। তাঁরা চীনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ফলে পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত পেশ হয়।

আরো একটি প্রস্তাব এদিন পাশ হয়েছে। পার্লামেন্ট জানিয়েছে, উইঘুর গণহত্যা বন্ধ না হলে ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক যাতে চীনে করতে দেওয়া না হয়, তার জন্য অলিম্পিক কমিটির কাছে কানাডা আবেদন জানাবে।

কানাডার এই প্রস্তাব নিয়ে চীন এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কানাডায় চীনের রাষ্ট্রদূত আগেই জানিয়েছিলেন যে, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কানাডা যে প্রস্তাব আনতে চলেছে, তাঁরা তা সমর্থন করেন না। তারপরেও কানাডার পার্লামেন্টে এই প্রস্তাব পাশ হওয়ায় চীন কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছে। সূত্র: রয়টার্স, এপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.