ডেল্টা লাইফে প্রশাসক নিয়োগ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

আজ বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আইডিআরএ-র সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার মাসিক সম্মানী ধরা হয়েছে চার লাখ টাকা।

এ বিষয়ে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে পাঠানো চিঠিতে আইডিআরএ বলেছে, বীমা আইন ২০১০ এর ৯৬ ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী প্রশাসক হিসেবে চূড়ান্তভাবে দায়িত্ব গ্রহণের ৪ মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৯৫(৩) এর আলোকে নতুন পলিসি ইস্যু আগের মতো অব্যাহত রাখা এবং কোম্পানির ব্যবসা ও অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি পরিচালনা করতেও বলা হয়েছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনায়।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কোম্পানির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মো. শাখাওয়াত নবী (অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব) এবং মো. রফিকুল ইসলামকে (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব) পরামর্শক (কনসালটেন্ট) হিসেবে শিগগিরই নিয়োগ দিয়ে কোম্পানির প্রশাসনিক কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনা করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

এতে বলা হয়েছে, আপনার (সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা) মাসিক সম্মানী সর্বমোট ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো। তবে উৎসব ভাতা (যদি থাকে) মোট সম্মানীর ৬০ শতাংশ পাবেন।

শিগগিরই সুপ্রতিষ্ঠিত কোনো দেশি বা বিদেশি অডিট ফার্ম দিয়ে কোম্পানির অডিট সম্পন্ন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যেকোনো সময়, যেকোনো বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন, ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা

এর আগে গত রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলন করে ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন তাদের কাছে ঘুষ দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষপূর্ণ আচরণেরও’ অভিযোগ আনে প্রতিষ্ঠানটি।

সেদিন ডেল্টা লাইফের নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসান লিখিত বক্তব্যে বলেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন এক সময় ডেল্টা লাইফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। ক্ষমতার সুযোগ পেয়ে তিনি নানাভাবে ডেল্টা লাইফকে হেনস্থা করছেন।

তিনি বলেন, আইডিআরএ চেয়ারম্যান উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডেল্টা লাইফের ২০১৯ সালের একচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস অনুমোদন দেয়নি। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মেয়াদ নবায়নের বিষয়টি অনুমোদন করেননি। তিনি (আইডিআরএ চেয়ারম্যান) নানা অজুহাতে অন্যায়ভাবে ডেল্টা লাইফকে জরিমানা করার হুমকি দিচ্ছেন। এছাড়া কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বহিষ্কার করে প্রশাসক নিয়োগেরও হুমকি দিচ্ছেন।

ঘুষ দাবির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় সমাধানের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি কোম্পানির কাছে প্রথমে ২ কোটি, পরবর্তীতে ১ কোটি ও সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। এ সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ও ট্রান্সক্রিপটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ আকারে দাখিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ অধিকতর তদন্ত করার আদেশ দিয়েছেন।

কামরুল আহসান জানান, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের কারণে ডেল্টা লাইফ কোম্পানি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এ হয়রানি বন্ধ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান কোম্পানির তিনি।

তবে পরদিন বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) অর্থসূচকের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর কাছে কোন ধরণের অনৈতিক সুবিধা বা ঘুষ দাবি করি নাই। বরং ডেল্টা লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান তার প্রতিনিধি আব্দুল আউয়াল (যার সাথে আমার ২৩ বছরের সম্পর্ক) এর মাধ্যমে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা গিফট্ পাঠিয়েছিল। তা তিন (০৩) বার আমি প্রত্যাখ্যান করায় তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে আমাকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। পরবর্তীকে আউয়ালকে ডেকে গিফট না নেওয়ার কারণে আমার উপর যেন মঞ্জুরুর রহমান মনে কষ্ট না পান তার জন্য অনুরোধ করি। তিনি (মঞ্জুরুর রহমান) চাইলে ওই টাকা কোথাও ডোনেট করে দিতে পারেন। পাশাপাশি আউয়ালকে আমি অনুরোধ করি যারা অভিযোগ করেছে, যাদের দীর্ঘ দিনের পাওনা রয়েছে এবং কর্তৃপক্ষের আইনি কাজে সংযুক্ত (এডেড পার্টি) রয়েছে তাদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। সেটি সে পরের দিন আমার সাথে দেখা করে আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে গোপনে কথা রেকর্ড করে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত ২ বছর ধরে নিরীক্ষা পরিচালনা করে। নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে নানা ধরণের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হলে তারা নানাভাবে আইনের অপব্যাখ্যা করে উল্টো কর্তৃপক্ষকে হয়রানির চেষ্টা করছে। মূলত তাদের নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে আমার তথা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা চাওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে।

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, আমি ইতোমধ্যে এবিষয়ে আদলতের শরনাপন্ন হয়েছি। বিষটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তার আগেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা সংবাদ সম্মেলন করে সুষ্ঠু তদন্ত বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে নিজেদের অনিয়ম ও দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে যা নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার অপকৌশল মাত্র। আদালতের তদন্তাধীন ও বিচারাধীন কোন বিষয়ে এ ভাবে পাবলিকলি প্রেস কনফারেন্স করা উদ্দেশ্যমূলক।

এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য বড় ধরণের হুমকী। পাশাপাশি শিষ্টাচার বর্হির্ভুত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা ও বটে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.