বাংলাদেশে বিনিয়োগের সেরা সময় এখনঃ বিএসইসি চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে এগোতে থাকলে এখনই বাংলাদেশে বিনিয়োগের সময় ও উপযুক্ত জায়গা। এখন বিনিয়োগ না করলে ভুল হয়ে যাবে। কারণ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। তখন বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ করা হবে।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আরব আমিরাতের দু্বাইয়ে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ আয়োজিত ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটস’ শীর্ষক রোড শোতে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বিএসইসির সাবেক কমিশনার ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আরিফ খান এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

রোড শো’তে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে এখন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অনেক বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। এসব প্রকল্পের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাত এই বিনিয়োগের যোগান দিতে পারবে না। কারণ স্বল্প মেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়ন করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পুঁজিবাজার থেকেই এসব অর্থায়ন করতে হবে। বন্ডের মাধ্যমে সহজেই এসব প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। এসব বন্ডে বিনিয়োগ করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ভাল রিটার্ন পেতে পারেন।

গত কয়েক মাসে অনেক বন্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি জানান, অনুমোদিত সব বন্ডই বিক্রি হয়েছে। কোন বন্ড আন্ডারসাবসক্রাইব হয়নি। এই বন্ড ব্যবসায়িদেরকে এগিয়ে নেবে। যারা ঝুঁকি নিতে না চায়, তারা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, গত ২দিন আমরা দুবাইয়ের বিভিন্ন ব্যাংক ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখেছি।

এতো আইপিও কেনো দেওয়া হয় কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে ক্যাপিটাল দেওয়া না হলে, কে দেবে? সেকেন্ডারি মার্কেট হলো বাহির হওয়ার রাস্তা। তাই আমরা এখন প্রাইমারি মার্কেটকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, প্রতিটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ১০-১৮ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেবে। এখন কেউ যদি লোকসান করতে না চায়, তাহলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়া বন্ডে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এই ২ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে সক্ষমতা থাকলে নিজেই পোর্টফোলিও ম্যানেজ করতে পারে। এক্ষেত্রে ঝুঁকিও তার। ফলে লোকসান করে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না।

প্রধান অতিথি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, গ্রীন ফিল্ডের প্রকল্পকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোনো কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, সে কেনো শেয়ারবাজারে আসবে। তাই গ্রীন ফিল্ডের প্রজেক্টকে তালিকাভুক্তির সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের তালিকাভুক্ত কোম্পানি আছে, তাদেরকে দিতে হবে। তারপরেও ওই তালিকাভুক্ত কোম্পানির অতিত রেকর্ড, উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ইতিহাস বিবেচনায় নিতে হবে।

বিশেষ অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বাংলাদেশে শেয়ারবাজারসহ সব ক্ষেত্রেই এখন বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট সময়। আমাদের শেয়ারবাজার সময়ের ব্যবধানে অনেক উন্নত হয়েছে। অনলাইনে বিও খোলাসহ নানা অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমান কমিশন আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরিফ খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশীদের বিনিয়োগ ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আকার খুবই দূর্বল। বাজারের উন্নয়নের জন্য এই দুই খাতের অংশগ্রহন বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানিগুলো থেকে মন্দাবাজারেও উল্লেখযোগ্য রিটার্ন পাওয়া গেছে। এজন্য ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যের কথায় দূর্বল শেয়ারের পেছনে দৌড়ালে লোকসানের শঙ্কা বাড়ে। এই কাজ করে লোকসান হলে অনেকে আবার সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দোষারোপ করে। এটা ঠিক না। তাই বিনিয়োগের কোম্পানির তথ্যাদি বিশ্লেষণ, করপোরেট গভর্ণেন্স পরিপালনের বিষয়, অতিত রেকর্ড দেখে নিতে হবে। আর সেটা করা সম্ভব না হলে ভালো ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে হবে।

রোড শো’র স্পন্সর ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রহমত পাশা তার বক্তব্যে প্রবাসি বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন। যারা দুবাই মলের পাশে একটি ডিজিটাল বুথ চালু করতে যাচ্ছেন। ওই বুথে গিয়ে এবং বাসায় বসেও দুবাইবাসীরা লেনদেন করতে পারবেন বলে জানান তিনি। এসময় তিনি প্রবাসিদের জন্য বিনিয়োগ সুবিধা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে প্রবাসিদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে কোনো ট্যাক্স নেই বলে জানান। যা বিশ্বে খুবই বিরল ঘটনা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএসইসির কমিশনার কামালুজ্জামান, নির্বাহি পরিচালক মাহবুবুল আলম, বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মাহতাবুর রহমান, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও রাশেদুল হাসান।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.