হুথিদের ‘সন্ত্রাসী স্বীকৃতি’ তুলে নিচ্ছেন বাইডেন, গৃহযুদ্ধ বন্ধের আশা ইয়েমেনে

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার একদম শেষ মুহূর্তে যেসব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ইয়েমেনি হুথিদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া। তবে দায়িত্বগ্রহণের দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই সেই স্বীকৃতি প্রত্যাহার করতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

শুক্রবার (০৫ জানুয়ারি) দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্ক এক ঘোষণায় বলেন, হুথি গোষ্ঠীর ওপর ট্রাম্পের জুড়ে দেওয়া সন্ত্রাসী তকমা শিগগিরই প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বিষয়টি বাতিল করতে মার্কিন নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদকেও ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ক্ষমতার শেষ মুহূর্তে হুথিদের সন্ত্রাসী ঘোষণা দেন। সেখানকার যুদ্ধে দেশটির অবস্থা এমনিতেই খুবই নাজুক। এ রকম চলতে থাকলে মানবিক পরিস্থিতিকে আরো ত্বরান্বিত করবে।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে অস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্তের একদিন পরই মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা এল। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ‘অপরাধমূলক অভিযান’ আর সমর্থন করবে না জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেনে গত ৬ বছর ধরে চলমান যুদ্ধ বন্ধে ওয়াশিংটন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, গৃহযুদ্ধ অবসানে তার প্রশাসন বেশ সচেতন।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইয়েমেনের প্রায় আড়াই কোটি জনগণের মধ্যে ৮০ শতাংশেরই জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। দেশটির এই পরিস্থিতিকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বাজে মানবিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র একদিন আগে, অর্থাৎ গত ১৯ জানুয়ারি ইয়েমেনি হুথিদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এর ফলে হুথিদের সঙ্গে মার্কিন নাগরিক ও সংস্থাগুলোর আর্থিক লেনদেন পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

অবশ্য জাতিসংঘ, রেড ক্রসের কার্যক্রম এবং কৃষি পণ্য, ওষুধ ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম রফতানি এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রাখে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেটি ইয়েমেনের সংকট কাটাতে যথেষ্ট নয় জানিয়ে ওই স্বীকৃতি পুরোপুরি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা।

২০১৫ সালে ইরান-সমর্থিত হুথিদের দমনে ইয়েমেনে প্রবেশ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। লড়াইটি ইয়েমেনি সহিংসতা হিসেবে দেখালেও আদতে সেটি ইরান-সৌদির ছায়াযুদ্ধ হিসেবে মনে করা হয়। এতে বরবরই পূর্ণ সমর্থন ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেন সহিংসতায় সব পক্ষই যুদ্ধ আইন লঙ্ঘন করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধপরাধের মতো গুরুতর অপরাধও হচ্ছে।

সংস্থাটির তথ্যমতে, সেখানে সৌদি জোট এবং হুথি যোদ্ধা উভয়পক্ষই জনবহুল এলাকায় মর্টার, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ সহিংসতায় ইয়েমেনের হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েক লাখ।

সূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.