ফেসবুক বন্ধ মিয়ানমারে

ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারের সামরিক সরকার দেশটিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের নাম করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অন্য বার্তা আদান-প্রদান (মেসেজিং) পরিষেবাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরোধী শক্তি ফেসবুকে ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। ফেসবুক মিয়ানমারের বেশির ভাগ মানুষের কাছে প্রধান ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম। মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান শহরের ইয়াঙ্গুনসহ অন্যান্য শহরে মানুষ থালাবাসন এবং গাড়ির হর্ন বাজিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এসব প্রতিবাদের ছবি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া মিয়ানমারে ভোটে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার প্রতিবাদে দেশটির চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। দেশটির অন্তত ৩০টি শহরের ৭০টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এই কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছেন। গতকাল বুধবার থেকে তাঁরা সামরিক শাসনের অধীনে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের যোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয় আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটিতে অন্তত আড়াই কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুক বন্ধের কারণ হিসেবে যোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে বলেছে, ‘এই মুহূর্তে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী লোকজন… ফেসবুক ব্যবহার করে ভুয়া খবর ও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে এবং এর ফলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।’

এদিকে ফেসবুক বন্ধ করার বিষয়ে মিয়ানমারের শীর্ষ মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর নরওয়ের টেলিনর আসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। তবে, ফেসবুক বন্ধ রাখার নির্দেশকে যথার্থ কিংবা প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে না টেলিনর কর্তৃপক্ষ।

এক বিবৃতিতে টেলিনর বলেছে, ‘যদিও মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী, (ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ার) নির্দেশের ভিত্তি রয়েছে, টেলিনর বিশ্বাস করে না যে প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতার ভিত্তিতে বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এমন অনুরোধ করা হয়েছে।’

এ ছাড়া ফেসবুকের মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ফেসবুক খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মিয়ানমারের মানুষ যাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং পরিবার, পরিজন ও বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, সেজন্য ফেসবুক পুনরায় চালু করা উচিত।’

মিয়ানমারে আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার অতটা জনপ্রিয় নয়। আর, টুইটার এখনো খোলাই আছে। এই মুহূর্তে দেশটিতে টুইটারে সিভিল ডিসওবিডিয়েন্ট মুভমেন্ট ও জাস্টিস ফর মিয়ানমার- এ দুটি হ্যাশট্যাগ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এর আগে রয়টার্স বুধবার এক প্রতিবেদনে জানায়, আমদানি-রপ্তানি আইন লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে দেশটির পুলিশ। রাজধানী নেপিদোর একটি থানায় এ অভিযোগ করা হয়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সু চিকে আটকে রাখার জন্য বলা হয়েছে দেশটির পুলিশের পক্ষ থেকে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেপিদোর একটি থানা থেকে প্রাপ্ত নথিতে বলা হয়েছে, সু চির বাসভবন অনুসন্ধান করে সামরিক কর্মকর্তারা কয়েকটি রেডিও খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো অবৈধভাবে আমদানি করে বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর থেকেই পুলিশের এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অনলাইন সরব হয়ে ওঠেন অনেকে। এ ছাড়া দেশটির সামরিক জান্তার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের সোচ্চার অবস্থান ক্রমেই আরো জোরদার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর খড়গহস্ত হলো মিয়ানমার জান্তা।

গত সোমবার সকালে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান অং সান সু চি, দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনী। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর দাবি, সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) অনিয়ম করে ওই নির্বাচনে একচেটিয়া জয়লাভ করেছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করেছে সেনা কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে সু চির সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে সেনাসদস্যদের দিয়ে নতুন করে কেবিনেট গঠন করেছে সেনা কর্তৃপক্ষ। ঘটনার শুরু থেকেই সু চির অবস্থান নিয়ে তাঁর দলের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছিল।

 

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.