টাইগারদের সামনে উইন্ডিজের ঘুরে দাড়নোর লড়াই

প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৬ উইকেটের জয়। অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবালের প্রথম পরীক্ষায় সফল একই সঙ্গে দেড় বছর পর খেলতে নেমে সাকিব আল হাসানের ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। ৩১৩ দিন পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ এ জয় নিঃসন্দেহেই তা বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।

কিন্তু পরিসংখ্যান যে স্বস্তিদায়ক নয়। ৫০ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য ১২৫। সেই লক্ষ্য ছুঁতে টাইগার ব্যাটসম্যানদের লেগেছে ৩৩.৫ ওভার বা ২০৩ বল। বাংলাদেশের ছয় ব্যাটসম্যানই রানের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বল খেলেছেন। বলার মত রান করতে পেরেছেন দলীয় অধিনায়ক তামিম। ৬৯ বলে তাঁর রান সংখ্যা ৪৪।

লিটন দাস বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফর্ম বয়ে নিয়ে আসতে পারেননি। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর পরীক্ষার্থী নাজমুল হোসেন শান্ত, জেসন মোহাম্মদকে ক্যাচ প্রাকটিস করিয়ে ১ রানে আউট হয়েছেন। ব্যাটসম্যান সাকিব ব্যর্থ হলেও বোলার সাকিব দলের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যথারীতি দেশসেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছেড়েছেন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে।

উইন্ডিজদের এক বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসাইনকে সামলাতেই হিমশিম খেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বাম হাতে যেমনি টার্ণ করিয়েছেন তেমনি টপ স্পিনে অফ স্টাম্পের বল ভিতরে ঢুকিয়ে তিনি বেশ বিপাকে ফেলেছেন দেশের ব্যাটসম্যানদের। পেস বোলিংয়ে আলজারি জোসেফও কম যান না। তাঁর লাইন-লেন্থ আর পেসের সংমিশ্রণে বেশ কয়েকবারই পরাস্ত হয়েছেন লিটন- তামিমরা।

জেসনও কি ছেড়ে কথা বলেছেন, কিপটে বোলিং করে নিয়েছেন ১ উইকেট। এক ম্যাচেই ৬ জন ক্রিকেটাররের অভিষেক। তবুও কি স্বস্তি নিয়ে জিততে পারলো বাংলাদেশ? হতে পারে দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে ফেরা,হতে পারে স্নায়ুচাপে ভোগা, হতে পারে মিরপুরের উইকেটের রহস্যময়ী চরিত্র। তা তো অজানা নয় টাইগারদের। তবুও ১২৫ রান চেজ করতে গিয়েও ৪ উইকেট হারানো।

মানান সই না হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ভাববার বিষয় টাইগার শিবিরে। এক রভমান পাওয়েল আর কাইল মেয়ার্স যেভাবে প্রতি আক্রমণে ঘুরে দাড়িয়েছিলেন তাতে উইন্ডিজদের রান ২০০ ছাড়িয়ে যেত নিশ্চিত। এজন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ আর স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। নাহলে সহজ ম্যাচটা আরো কঠিন করে জিততে হতো বাংলাদেশকে।

এক রুবেল হোসেন ছাড়া উইকেট পেয়েছেন সবাই। শুরুর দিকে মুস্তাফিজুর রহমান ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন। পুরো ম্যাচ জুড়েই দেশী ফিল্ডারদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। হাসানের সুইংটা আর গতিটাও ছিল উল্লেখযোগ্য। সাকিব ফিরেছেন, বল হাতে ৮ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছেন। বোলিং বিভাগ নিয়ে তাই চিন্তার খোঁড়াক নেই স্বাগতিক শিবিরে।

সেক্ষেত্রে ব্যাটিং নিয়ে আরো ভাবতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। ওদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সুনীল অ্যামব্রিস এবং মায়ার্স দারুণ শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচেও তাদের দুজনকে ফেরানোর দায়িত্বটা নিতে হবে মুস্তাফিজকেই। শেষদিকে পাওয়াল ঝড়টাও সামলানোর দায়িত্ব নিতে হবে বাংলাদেশের বোলারদের। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে জোসেফের পেস আর আকিলের স্পিন সামলোটাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াতে পারে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে।

এদিকে বোলিংয়ে এক মাইলফলকের সামনে দাড়িয়ে সাকিব। দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ উইকেট পেলেই ক্যারিয়ারের হাজারী উইকেটের এলিট ক্লাবে ঢুকে যাবেন তিনি। ৬ উইকেট পেলে কোন নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডটাও নিজের করে নেবেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার।

প্রথম জয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ওডিআই সুপার লিগে ১০ পয়েন্টও অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে পয়েন্ট তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সাকিব-তামিমরা। দ্বিতীয় ম্যাচে জিতলেই পাকিস্তানকে টপকে তৃতীয় স্থানে উঠবে টাইগাররা। একই সঙ্গে সিরিজও নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের।

সেরা একাদশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শিবিরে পরিবর্তনের আভাস নেই। যদিও প্রথম ম্যাচে শতভাগ ফিট না থাকা সাইফউদ্দিনকে এই ম্যাচে খেলাতে আগ্রহী হতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। ওদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। কেননা দলটির প্রধান কোচ সিমন্স জানিয়েছেন একাদশে পরিবর্তনের মতো খুব বেশি অতিরিক্ত ক্রিকেটার নেই তাদের।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাব্য একাদশ: জসুয়া ডি সিলভা (উইকেটরক্ষক), সুনীল অ্যামব্রিস, জ্যাসন মোহাম্মদ (অধিনায়ক), আন্দ্রে ম্যাককার্থী, রেমন্ড রেইফার, রভম্যান পাওয়েল, কাইল মায়ার্স, এনক্রুমাহ বনার, চিমার হোল্ডার, আকিল হোসেইন ও আলজারি জোসেফ।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.