বিশ্ব বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে: ডব্লিউএইচও

মহামারি করোনা ভাইরাস তাণ্ডবে বিপর্যস্ত বিশ্ব। করোনার ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সব দেশ। এ অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় এক বছর বিশ্ববাসী অপেক্ষা করেছে কার্যকর ভ্যাকসিনের জন্য। সবশেষ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আনলেও বর্তমানে সেটা ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতেই বিতরণ চলছে। এই অসম নীতির কারণে বিশ্ব একটি ‘বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে’ বলে সতর্ক করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান।

আজ মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ডব্লিউএইচওর মহাসচিব তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস গতকাল সোমবার এই সতর্কতার কথা উচ্চারণ করেন। তিনি জেনেভায় ডব্লিউএইচওর নির্বাহী বোর্ডের একটি বৈঠকের উদ্বোধনীতে বক্তব্য দেন।

তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, গরিব দেশগুলোয় করোনার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের আগে ধনী দেশগুলোর কম বয়সী ও স্বাস্থ্যবান লোকজনের টিকা পাওয়াটা মোটেই ঠিক নয়।

ডব্লিউএইচওর মহাসচিব বলেন, বিশ্বের ৪৯টি ধনী দেশে ইতিমধ্যে ৩৯ মিলিয়ন ডোজের বেশি করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, একটি গরিব দেশে মাত্র ২৫ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। ২৫ মিলিয়ন নয়, ২৫ হাজারও নয়, মাত্র ২৫টি। এমনকি অনেক দেশ সেই ২৫টিও পায়নি!

ডব্লিউএইচওর প্রধান বলেন, তাকে রূঢ়ভাবে বলতে হচ্ছে, বিশ্ব এক বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। আর এই ব্যর্থতার মূল্য বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোয় জীবন ও জীবিকা দিয়ে দিতে হবে।

ধনী দেশগুলোর ‘আমিই প্রথম’ দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র সমালোচনা করেন তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। তিনি বলেন, এই নীতি আত্মঘাতী হবে। কারণ, এই নীতি টিকার দাম বাড়িয়ে দেবে। টিকার মজুতকে উৎসাহিত করবে।

ডব্লিউএইচওর মহাসচিব বলেন, শেষ পর্যন্ত এসব কর্মকাণ্ড মহামারিকে কেবল দীর্ঘায়িতই করবে। এটা থামাতে বিধিনিষেধ দরকার।

করোনার টিকা প্রস্তুতকারীদেরও সমালোচনা করেন তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। তার এই সমালোচনার কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো বৈশ্বিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে টিকার তথ্য ডব্লিউএইচওকে না দিয়ে ধনী দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে করোনার টিকার ন্যায্য প্রাপ্তির অঙ্গীকার এখন গুরুতর ঝুঁকিতে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন ডব্লিউএইচওর প্রধান। করোনার টিকা বণ্টনের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের বিষয়ে পূর্ণ প্রতিশ্রুতির ডাক দেন তিনি।

ডব্লিউএইচওর তত্ত্বাবধানে কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী মাসে টিকার সরবরাহ শুরু হতে পারে। বিশ্বের ১৮০টির বেশি দেশ কোভ্যাক্স উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে।

কোভ্যাক্সের উদ্দেশ্য হলো অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর জন্য ২০২১ সালের মধ্যে ২০০ কোটি টিকার ডোজ নিশ্চিত করা।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.