রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনসহ অন্য দেশগুলোর আরও সম্পৃক্ততা চায় বাংলাদেশ

চীনসহ অন্য দেশগুলোকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আরও সম্পৃক্ত অবস্থায় দেখতে চায় বাংলাদেশ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে রবিবার (১৭ জানুয়ারি)পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘চীন এখানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রয়েছে এবং তাদের একটি বড় উপস্থিতি আমরা আশা করবো। তবে এটি ঠিক যে, শুধু চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে সেটি নয়। আমরা চাইবো, আসিয়ানের আহা সেন্টার এবং ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যদি যুক্ত হয়, তবে রোহিঙ্গারা আত্নবিশ্বাস ফেরত পাবে।’

পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে চীন জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি তারা কিছু লজিস্টিকের কাজ করছে। এছাড়া জাপান ও ভারতও কিছু করেছে।’

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সবকিছু নির্ভর করছে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপরে। আমরা চাইবো বর্ষার আগে প্রত্যাবাসন শুরু হোক।’

প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন সর্বোচ্চ লেভেলে প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেছে, সেটি একটি নতুন বিষয়। সুতরাং, আমরা যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা আশা করছি, সেটি এবার ভালো অবস্থায় আছে।’

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই- এর সম্প্রতি মিয়ানমার সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময়ে রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং যাতে করে মিয়ানমারের সহযোগিতা পাওয়া যায়, সেটি নিশ্চিত করার বিষয়ও সেখানে নিশ্চয় ছিল। এটা আমার ধারণা। কারণ, চীনেরও একটি ফলাফল দেখানোর দরকার আছে। আমরা যেমন বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা নিয়ে বসে আছি, তেমনই চীন গত দুই বছর ধরে ত্রিপক্ষীয়ভাবে এখানে যুক্ত আছে। সুতরাং, যদি প্রত্যাবাসন শুরু না হয়, তবে চীনের ভাবমূর্তির বিষয়টি সামনে চলে আসবে।’

এক বা দুই হাজার রোহিঙ্গা যাওয়ার পরে প্রত্যাবাসন বন্ধ হয়ে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঝুঁকি সবসময়ে আছে। কিন্তু শুরুটা এ রকমের হবে। একদিনে এক লাখ পাঠানো যাবে না। একটি গ্রামে কত জন লোক থাকে, এক বা দুই হাজার। আমরা গ্রামভিত্তিক রোহিঙ্গা দিয়ে শুরু করবো। কিন্তু শুরু হওয়া দরকার।’

বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যত শিগগির সম্ভব প্রত্যাবাসন। এ ব্যাপারে চীন আমাদের সহযোগিতা করছে। তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই বৈঠক হচ্ছে বলে তিনি জানান।

বৈঠকে নতুন কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘একটি নতুন হতে পারে— বিক্ষিপ্তভাবে রোহিঙ্গা নির্বাচন করার বদলে গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক যদি নির্বাচন করি, সেটি বরং বেশি বাস্তবসম্মত হবে। এভাবেই আমরা আগানোর চেষ্টা করবো। একটি গ্রাম বা অঞ্চলের রোহিঙ্গাদের নির্বাচন করে, সেই সংখ্যা এক হাজার বা দুই হাজার হতে পারে, একটি পাইলট-ভিত্তিতে তাদের ফেরত পাঠালে সেটি বাস্তবসম্মত হবে।’

রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পরে তাদের সহায়ক পরিবেশ দেওয়ার দায়িত্ব মিয়ানমারের এবং আমাদের কাজ হচ্ছে রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করা। তারা স্বেচ্ছায় যেতে চায় কিনা, সেটি নির্ধারণ করে  ফেরত পাঠানো বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘একবার চলে যাওয়ার পর তখন কিন্তু তাদের বিষয়ে মিয়ানমারের দায়িত্ব হয়ে যাবে। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদ থাকে, ঠিকমতো ফেরত যেতে পারে, সেটি মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে।’

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.