জঙ্গি সংগঠন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন ৯ জন

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে জঙ্গি মতাদর্শ ছড়ানো এক দম্পতিসহ নয় তরুণ-তরুণীর একটি দল আজ বৃহস্পতিবার র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে র‌্যাব সদর দফতরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেন। এসময় স্বরাষ্টমন্ত্রী ও আইজিপি জঙ্গিদের তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেন।

আত্মসমর্পণ করা ওই নয়জনের মধ্যে দুজন নারী ও সাতজন পুরুষ। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদের কাউকে ছয় মাস, কাউকে দুই মাস ধরে অনুসরণ করে আসছিল র‍্যাব। তারা কেউ চিকিৎসক, কেউ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, কেউ ছাত্র। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের এই দলের কেউ জেএমবি, কেউ আনসার আল ইসলামের সদস্য হয়েছে। র‍্যাব জঙ্গি সেজেই তাদের সঙ্গে মেশে, পরে নজরদারিতে এনে তাদের পথটি যে ভুল, তা তাদের বোঝানো হয়। পরে তারা আত্মসমর্পণে রাজি হয়।

র‌্যাব বলছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জঙ্গিদের সঠিক প্রক্রিয়ায় ডি-রেডিক্যালাইজেশন করে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছেন তারা। দীর্ঘ সময় কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তাদের উগ্র আদর্শকে ধ্বংস করা হয়েছে।

আত্মসমর্পণ করা জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে আছেন জেএমবি’র ছয় জন এবং আনসার আল ইসলামের তিন জন সদস্য। আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিরা হলেন- শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত (৩৪), ডা. নুসরাত আলী জুহি (২৯), আসমা ওরফে রামিসা (১৮), মোহাম্মদ হোসেন হাসান গাজী (২৩), মো. সাইফুল্লাহ (৩৭), মো. সাইফুল ইসলাম (৩১), মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬) মো. সাইদুর রহমান (২২), আবদুর রহমান সোহেল (২৮)।

শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত সর্ম্পকে র‌্যাব জানায়, সিলেটের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হিযবুত তাহরিরে যুক্ত হন তিনি। পরবর্তীতে তিনি হিযবুত তাহরিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শীর্ষ পর্যায়ে চলে যান। তিনি ২০০৯ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। পরে ২০১১ সালে মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ডা. নুসরাতকে বিয়ে করেন। স্ত্রী নুসরাতও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ। পরবর্তীতে সংগঠনের নির্দেশনায় তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ২০১৭ সাল থেকে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো অভিযানে গ্রেফতার আতঙ্কে তিনি ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় বাসা বদল করতে থাকেন।

আবিদা জান্নাত আসমা ওরফে রামিসা (১৮) সর্ম্পকে র‌্যাব জানায়, উগ্রবাদে আকৃষ্ট হওয়ার পর বাবা-মাকে না জানিয়ে ২০১৮ সালে আনসার আল ইসলামের এক সদস্যকে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে বিয়ে করেন। শুরু হয় স্বামীর সঙ্গে আত্মগোপনের জীবন। আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি আত্মগোপনে থেকে ফেরারি জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। ফলে সাংগঠনিকভাবে পরিচিত স্বজনের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কখনো জঙ্গিবাদকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। এজন্যই আমরা জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় অনেক খানি এগিয়ে গিয়েছি। জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে না পারলেও আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমরা জঙ্গি দমনে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছি। আমরা যে সব সময় কঠোর হস্তে জঙ্গি দমন করি বিষয়টি তেমন না। আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনছি।

‘নব দিগন্তে প্রত্যাবর্তন’ স্লোগানের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ করেন একাডেমিশিয়ান, ইসলামি স্কলার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.