পাটবীজে কৃষকদের আগ্রহী করতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হবে: কৃষিমন্ত্রী

পাটবীজে কৃষকদের আগ্রহী করতে ও কৃষকেরা যাতে চাষ করে লাভবান হয় সেজন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, দেশে পাটবীজ উৎপাদনের মূল সমস্যা হলো অন্য ফসলের তুলনায় কম লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা চাষ করতে চায় না।

এজন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সভায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নাসিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষিসচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বতি উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা পাটবীজের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারি না। আমরা পাটবীজ ও পাটের উৎপাদন বাড়াবো। পাট চাষকে এদেশের চাষিদের কাছে লাভজনক ফসলে উন্নীত করবো। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য পাটের অসাধারণ ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আবার ফিরেয়ে আনবো।

ড.আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছে। সেই জিনোম ব্যবহার করে আমাদের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল পাটবীজ রবি-১ জাত উদ্ভাবন করেছে। এর ফলন ভারতের পাটজাতের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি। কৃষক পর্যায়ে এটির চাষ বাড়াতে পারলে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) বলেন, ভর্তুকি দিয়ে হলেও পাটবীজের উৎপাদন বাড়াতে হবে। অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে সবসময় অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। তার সঙ্গে পাটবীজ রপ্তানির ওপর সংশ্লিষ্ট দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ভয়ও থাকে।

বাংলাদেশে বছরে কৃষক পর্যায়ে/প্রত্যায়িত বীজের চাহিদা হলো ৫ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন। আর চাহিদার বিপরীতে বিএডিসি সরবরাহ করে ৭৭৫ মেট্রিক টন (তোষা পাট- ৫১৫ টন; দেশি- ২৬০ টন)। তোষা পাটবীজের প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আনতে হয়। এই বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ৫ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ এই ৫ বছরের মধ্যে দেশে ৪৫০০ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তোষা পাটবীজ উৎপাদনের জন্য ৮ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে চাষের প্রয়োজন হবে।

সভায় জানানো হয়, পাটআঁশ এবং পাটবীজ ফসল দুইটি আলাদা ফসল। পাটবীজ রবি মৌসুমের (আগষ্ট-ডিসেম্বর) ফসল। তোষা পাটবীজ সাধারণত আগস্ট-ডিসেম্বর মাসের ফসল। এ সময়ে উচ্চমূল্যের রবি ফসলের পরিবর্তে কৃষক পাটবীজ উৎপাদনে তেমন আগ্রহী নন। তাই পাটবীজ উৎপাদনের পরিবর্তে পাট চাষের সময় কৃষক বাজার থেকে বীজ ক্রয় করে পাট চাষ করা লাভজনক বলে মনে করে। দেশে মূলত দেশি ও তোষা এ দুই জাতের পাটের চাষ হয়। বর্তমানে দেশি পাট ১৫ শতাংশ ও তোষা পাট ৮৫ শতাংশ উৎপন্ন হয়। তোষা পাটবীজের চাহিদার প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ ভারত থেকে আমদানিকৃত জেআরও-৫২৪ জাতের মাধ্যমে মেটানো হয়।

অথচ, জিনোম গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিটউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত পাটের জাত রবি-১ (তোষা পাট-৮) এর ফলন জেআরও-৫২৪ জাতের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি। এটি ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলের কৃষকের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। যথাযথভাবে রবি-১ পাট জাতকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হবে।

সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল কালাম, এনডিসি, সংস্থা প্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.