ক্রাইস্টচার্চের নায়ক উইলিয়ামসন

ক্রাইস্টচার্চের সবুজ উইকেট, সঙ্গে শাহীন শাহ আফ্রিদি এবং মোহাম্মদ আব্বাসদের আগুনে বোলিং। সবকিছুকে ছাপিয়ে ক্রাইস্টচার্চের নায়ক কেন উইলিয়ামসন। তাঁর সুনিপুণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে রান পাহাড়ে নিউজিল্যান্ড। সেই সঙ্গে টানা তিন টেস্টেই ব্যাটের কারিশমা দেখিয়েছেন তিনি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ২৫১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এরপর ছুটিয়ে কাটিয়ে দলে ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে মাউন্ট মঙ্গানুইতে খেলেছিলেন ১২৯ রানের ইনিংস। তৃতীয় ম্যাচে এসে তুলে নিলেন আরও একটি ডাবল সেঞ্চুরি। যা কি-না তাঁর ক্যারিয়ারে চতুর্থতম। উইলিয়ামসনের সঙ্গে রানের গতি বাড়িয়েছেন হ্যানরি নিকোলস এবং ড্যারিল মিচেল। সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তারা দুজনও। এই তিনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৬৫৯ রান তুলে ডিক্লেয়ার করেছে স্বাগতিকরা।

দ্বিতীয় দিনশেষে তিন উইকেটে ২৮৬ রান করা নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় দিন শুরু করেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসন এবং নিকোলস। এদিন প্রথম সেশনের শুরুতেই আব্বাসকে চার মেরে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নিকোলস। পাকিস্তানের বোলারদের পাত্তা না দিয়ে সবুজ উইকেটে দারুণ সব শট খেলে দলকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে নিয়ে যান তারা দুজন। এরপর ৯৬তম ওভারের চতুর্থ বলে লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন উইলিয়ামসন। ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে তাঁর লেগেছে ১৪৪ ইনিংস। যা কিনা রিকি পন্টিং, ব্রায়ান লারা, অ্যালেস্টার কুক, জ্যাক ক্যালিস এবং এবি ডি ভিলিয়ার্সের চেয়ে কম ইনিংস খেলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি।

নাসিম শাহ, আফ্রিদিরা যখন উইকেট নিতে ব্যর্থ তখন নিউজিল্যান্ডের জুটিতে আঘাত হানেন আব্বাস। দলীয় ৪৪০ রানের সময় ১৫৭ রান করা নিকোলসকে ফেরান এই ডানহাতি পেসার। ফলে ভাঙে তাদের দুজনের ৩৬৯ রানের অনবদ্য জুটি। যা কিনা নিউজিল্যান্ডের যেকোনো উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি।

সেই সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে দেশের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটি! এর আগে ২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড ২৭১ রানের জুটি গড়েছিলেন রস টেইলর ও জেসি রাইডার। নিকোলস বিদায় নিলেও এক প্রান্তে অবিচল ছিলেন উইলিয়ামসন। এদিন থিতু হতে পারেননি বিজে ওয়াটলিংও। তবে উইলিয়ামসনকে বেশ ভালোভাবেই সঙ্গ দিয়েছেন মিচেল।

মিচেলের সঙ্গে তাঁর শতরানের জুটি পূর্ণ হওয়ার আগেই ৩২৭ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করেন উইলিয়ামসন। এরপর রান তোলায় মনোযোগ দেয়ার পর ফাহিম আশরাফের বলে ফিরে যেতে হয় তাকে। প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা ব্যাটিং করে ২৮ চারের সাহায্যে ৩৬৪ বলে ২৩৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে বিদায় নেন।

এরপর ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি তুলে নেন মিচেল। কাইল জেমিসনের সঙ্গে ৫০ বলে ৭৪ রানের জুটি গড়েন তিনি। মিচেলের সেঞ্চুরি পূর্ণ হওয়ার পরই ইনিংস ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের হয়ে দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন আব্বাস, আশরাফ এবং আফ্রিদি।

তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি পাকিস্তান। দলীয় ৩ রানের সময় কোনো রান না করেই সাজঘরে ফিরেন শান মাসুদ। টানা তিন ইনিংসেই শূন্য রানে ফিরে গেলেন তিনি। তৃতীয় দিনশেষে ১ উইকেটে ৮ রান করেছে সফরকারীরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রথম ইনিংস শেষে পাকিস্তান: ২৯৭/১০ (৮৩.৫ ওভার) (আজহার আলী ৯৩,মোহাম্মদ রিজওয়ান ৬১, ফাহিম আশরাফ ৪৮, জাফর গহর ৩৪, কাইল জেমিসন ৫/৬৯, টিম সাউদি ২/৬১)
প্রথম ইনিংস শেষে নিউজিল্যান্ড: ৬৫৯/৬ (১৫৮.৫ ওভার) (কেন উইলিয়ামসন ২৩৮, হ্যানরি নিকোলস ১৫৭, ড্যারিল মিচেল ১০২*, মোহাম্মদ আব্বাস ২/৯৮, শাহিন শাহ আফ্রিদি ২/১০১)
তৃতীয় দিনশেষে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান: ৮/১ (১১ ওভার) (আবিদ আলী ৭*, মোহাম্মদ আব্বাস ১*, কাইল জেমিসন ১/১)

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.