এফডিসিকে অনুদান, বকেয়া বেতন পেলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো নেই বললেই চলে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কমেছে চলচ্চিত্রের শুটিং। যার ফলে আয়ের সবচেয়ে বড় উৎসটি হুমকির মুখে পড়ে গেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে নানা রকম অব্যবস্থাপনা।

এমন নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে গেল পাঁচ বছর ধরে আর্থিক সঙ্কটের মুখে এফডিসি। নিজস্ব তহবিল থেকে কর্মীদের বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে বছর বছর। বাধ্য হয়ে অনুদানের আশ্রয় নিয়েছে এক সময়ের লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি।

বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বেতন না পেয়ে মালী, ক্লিনার, নিরাপত্তারক্ষীসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর প্রায় ২ শতাধিক কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। বেতন পাচ্ছিলেন না সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। অবশেষে বকেয়া বেতন বুঝে পেলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আজ ৪ জানুয়ারি দুই মাসের বকেয়া বেতনের টাকা কর্মীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যোগ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া। তিনি জানান, আগামী দুই দিনের মধ্যে বাকি থাকা অন্য মাসের বেতনও যোগ হবে।

সেপ্টেম্বর থেকে বেতন আটকে ছিলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের কারখানা খ্যাত প্রতিষ্ঠানটিতে। বেশ কয়েক মাসের বকেয়া বেতন পেয়ে এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে যেন আজ ঈদের আনন্দ। বইছে উৎসবের আমেজ।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটির ২৬১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনভাতাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে ১৮ কোটি টাকা চেয়ে গত বছরের মে মাসে আবেদন করেছিলেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে এফডিসিকে ৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা এফডিসি কর্তৃপক্ষ গতকাল ৩ জানুয়ারি হাতে পেয়েছে বলে জানান হিমাদ্রি বড়ুয়া।

তিনি বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বকেয়া বেতন ও নতুন ভবনের কাজের জন্য ১৮ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চেয়েছিলো এফডিসি কর্তৃপক্ষ। আর অবসরে যাওয়া এফডিসির ৭২ কর্মীর আনুতোষিক (গ্রাচুইটি) ও ছুটির নগদায়ন বাবদ পাওনা ১২ কোটি টাকা চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল এফডিসি। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল বকেয়া বেতন বাবদ ৫ কোটি ও অবসরে যাওয়া কর্মীদের জন্য ২ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গেল অক্টোবরের শুরুতে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, এফডিসির আর্থিক সঙ্কটের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে বেতন পরিশোধ করতে না পারায় সরকারের কাছে অর্থ চাওয়া হয়েছে। গত বছরের মে মাসের শুরুর দিকে অর্থ চেয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন পাঠিয়েছিলেন নুজহাত ইয়াসমিন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মনিরুল ইসলামের স্বাক্ষরে আবেদনটি ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।

এর আগে গত বছরের মে মাসেও ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ‘অনুদান’ নিয়ে মার্চ ও এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছে এফডিসি। অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে অগাস্ট পর্যন্ত বেতন দিতে পারলেও সেপ্টেম্বর থেকে ফের পুরানো সঙ্কটেই ধুঁকছিলো প্রতিষ্ঠানটি। অবশেষে নতুন বছরের শুরুতেই আনন্দে ভাসলো এফডিসি।

তবে অবসরে যাওয়া কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ হাতে না পাওয়ায় কিছুটা অস্বস্তি রয়েই গেছে বলে দাবি করছেন এফডিসির অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তাদের মতে, অবসরে যাওয়া কর্মীরা তাদের পাওনা টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে তাদের অমানবেতর দিন যাপন করতে হচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা, কর্তৃপক্ষ এফডিসিতে কাজ করে অবসরে যাওয়া ওইসব কর্মীদের মুখে শিগগিরই হাসি ফুটানোর ব্যবস্থা করবে।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.