আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুলিশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে: প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ মিশনেও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসিত হয়েছে। নারী পুলিশদেরও ভূয়সী প্রশংসা শুনতে পাই।

রাজশাহীর সারদায় থাকা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৭তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আজ রোববার (০৩ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংযের মাধ্যমে গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। নানান ধরনের অপরাধ দমন তথা পুলিশকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে।

তিনি বলেন, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট যেমন- পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, শিল্প পুলিশ গড়ে তোলা হচ্ছে।

পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় গ্রহণের পর দেখি পুলিশের বাজেট মাত্র ৮৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা কর হয়েছে। পুলিশের রেশনভাতা ২০ শতাংশ থেকে পর্য়ায়ক্রমে শতভাগ করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ফের ক্ষমতায় এসে দেখি বাজেট মাত্র তিন হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালে এ বাজেট বৃদ্ধি করে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়। পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে আধুনিক অস্ত্র, পোশাক, ঝুঁকিভাতা, টিফিন ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। উন্নততর প্রশিক্ষণের জন্য স্টাফ কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছরে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে ১ হাজার ৫০১টি ক্যাডার পদসহ ৮২ হাজার ২৩১টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের জনবল ২ লাখ ১২ হাজার ৮৩৬ জন। সারাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমনে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন ইউনিট গঠন অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, শুধু তা-ই নয়, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে পুলিশ এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করা হয়েছে। অপরাধী শনাক্তকরণ এবং মামলা তদন্তে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার পুলিশ সেন্টার , ডিএনএ ল্যাব, Automated Finger Print Identification System এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশে সংযোজিত হতে যাচ্ছে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’ যাতে অপারেশনাল ডিউটিতে অফিসার এবং ফোর্সরা হ্যান্ড ফ্রি রেখে অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

পুলিশ সদস্যদের কল্যাণের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্য পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের ভিত্তি আমাদের সরকারই গঠন করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশের জন্য কমিউনিটি ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি, বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আজকের নবীন কর্মকর্তারাও দেশের এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চ্যুয়ালি প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপাররা হলেন- ‘বেস্ট শুটার’ ও ‘বেস্ট ফিল্ড পারফর্মার মো. আবুল হোসাইন, বেস্ট ইন হর্সম্যানশিপ’ মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম, ‘বেস্ট একাডেমিক’ ও ‘বেস্ট প্রবেশনার’ এ দুটিতেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন স্নেহাশীষ কুমার দাস। প্যারেডে ১৩ জন নারী অফিসারসহ ৯৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.