ইরানের নিহত পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইসের সাহায্যে হত্যা করেছে ইসরায়েল। স্যাটেলাইটের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত ওই ডিভাইস বিজ্ঞানীর গাড়ির উপর গুলিবৃষ্টি করে বলে নতুন তথ্য সামনে আনলো ইরান। সোমবার ফখরিজাদেহ-র শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে এই দাবি করেছেন ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান।
তিনি জানিয়েছেন, পরমাণু বিজ্ঞানীর উপর যে হামলা হতে পারে, সে কথা আগেই জানিয়েছিল দেশের গোয়েন্দা বিভাগ। কোথায় হামলা হতে পারে তারও আভাস দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো ফখরিজাদেহের নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু যে কায়দায় তাঁর উপর হামলা চালানো হয়েছে, তা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে আটকানো সম্ভব ছিল না। কোনো ব্যক্তি বিজ্ঞানীর উপর আক্রমণ চালায়নি। রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস ব্যবহার করে তাঁর গাড়ির উপর গুলিবৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ। এ দিন আরো একবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান।
এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ টুইটে এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলেকে দায়ী করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, জঙ্গিরা আজ এক স্বনামধন্য ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে৷ ঘটনায় ইসরায়েলের জড়িত থাকার ব্যাপক প্রমাণ রয়েছে।
পরমাণু বিজ্ঞানীর উপর কীভাবে হামলা হয়েছিল, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য দিচ্ছিল ইরান। প্রথমে বলা হয়েছিল, বিজ্ঞানীর দেহরক্ষীদের সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষ হয়েছে। চার জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছিল। পরে অবশ্য সে জঙ্গি মৃত্যুর বিষয়টি ভুল বলে জানানো হয়।
আরেকটি সূত্র জানায়, একটি পিকআপ ট্রাকে বিস্ফোরক ছিল। সেই বিস্ফোরণেই বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। সোমবার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে পিকআপ ট্রাকের কথা অস্বীকার করা হয়নি। দাবি করা হয়েছে, পিকআপ ট্রাকের বিস্ফোরণও হয়েছে। একই সঙ্গে রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইসের সাহায্যে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত বলেও জানানো হয়েছে।
ফারসিতে ‘আমাদ’ বা বাংলায় ‘আশা’ নামের পরমাণু প্রকল্পের প্রধান ছিলেন বিজ্ঞানী ফখরিজাদেহ৷ তবে এই প্রকল্প ২০০০ সালের দিকেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷ ইসরায়েল এবং পশ্চিমা দেশগুলো দাবি করে যে এটি একটি সামরিক প্রকল্প ছিল৷ কিন্তু তেহরান বরাবরই বলে আসছে এই প্রকল্পটি সামরিক ছিল না৷
তবে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, ইরান ২০০৩ সাল পর্যন্তও খুব কৌশলে পারমাণবিক বিস্ফোরক তৈরি সংক্রান্ত কার্যক্রম চালিয়েছে৷ পরমাণু শান্তি চুক্তি অনুসারে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম জমা রাখার কথা, তার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ মজুদ করার অভিযোগ সম্প্রতি উঠেছে ইরানের বিরুদ্ধে৷ সূত্র: রয়টার্স, এপি
অর্থসূচক/এএইচআর