একজন সুস্থ মানুষের দিনে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। দিনের তিন ভাগের দুই ভাগ কাজকর্মের জন্য আর এক ভাগ ঘুমের জন্য। কিন্তু এই এক ভাগের উপর নির্ভর করছে বাকি ২ ভাগ। কারণ মস্তিষ্ক আর শরীরের এক মাত্র বিশ্রাম হলো ঘুম। যদি আপনি ঠিক বা পরিপূর্ণ না ঘুমান তাহলে আপনার কাজ এবং মতিষ্কের উপর চাপ পড়বে। পরিশ্রম করতে হলে ৮ ঘন্টা ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাদের ঘুম না আসে তারাই একমাত্র বুঝেন যে অনিদ্রা কতটা কষ্টের। ঘুম না আসা মানে এটা একটা রোগ। ডাক্তারদের ভাষায় এর নাম ইনসমনিয়া।
ইনসমনিয়া দু’ধরনের। কখনও এটি হয় অ্যাকিউট বা সাময়িক। কেউ হয়তো রাস্তায় কোনও খারাপ দৃশ্য দেখেছেন বা কারও হয়তো সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে, সেই কারণ রাতে ঘুম এল না। এ ক্ষেত্রে ঘটনাটি মস্তিষ্ক নিজেই ধীরে ধীরে ভুলে যাবে, তাতেই অনিদ্রা এক সময়ে কেটে যাবে। কিন্তু কারও যদি ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা রোগ থাকে, তা হলে তার চিকিৎসা প্রয়োজন।
ডিপ্রেশন নাকি অন্য কোনও কারণ- কী কারণে তার ঘুম আসছে না, সেই কারণটিকে চিহ্নিত করে চিকিৎসা করতে পারলেই অনিদ্রার সমাধান সম্ভব হয়। জেনারেল মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল বললেন, আমাদের ঘুম পায়, কারণ ক্রমাগত কাজ করার ফলে আমাদের শরীরের এটিপি (অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট) অর্থাৎ শক্তি খরচ হয়। শরীর এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য একটু সময় নেয়। এই সময়টাই হল ঘুমের সময়। তখনই শরীর এটিপি বা শক্তির পুনরুৎপাদন করে নেয়। প্রকৃতি আমাদের মস্তিষ্ক থেকে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ ঘটায়, যার নাম মেলাটোনিন। এই মেলাটোনিন শরীরে ঘুমের সাইকেল বা চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই মেলাটোনিন সব সময়ে তৈরি হয় ঠিকই, কিন্তু আলোর উপস্থিতিতে নষ্ট হয়ে যায়। তাই উজ্জ্বল আলোয় ঘুম পায় না।
রাতে ঘুম না হওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে যে সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে, সেগুলো হল, দিনের বেলা ঘুম ঘুম ভাব কিন্তু ঘুম না আসা, সর্বক্ষণ গভীর ক্লান্তি, খারাপ মেজাজ, কাজে মন না বসা ইত্যাদি।
এ সব উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। তবে দৈনিক কতটা ঘুম প্রয়োজন, তার মাপ কিন্তু বয়স অনুযায়ী এক রকম নয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই মেলাটোনিন সংশ্লেষ ক্রমশ কমে আসতে থাকে। জন্মের পর এক মাস পর্যন্ত যেমন বাচ্চারা তেইশ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমোয়, কারণ তখন মেলাটোনিন সংশ্লেষ সবচেয়ে বেশি। একজন স্কুলে পড়া বাচ্চার (ক্লাস এইট পর্যন্ত) দিনে ঘুম দরকার অন্তত ন’ঘণ্টা। বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে সেটা গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচ ঘণ্টায়, কারণ মেলাটোনিন সংশ্লেষ তখন সবচেয়ে কম। যার যতটা ঘুম প্রয়োজন, তার কোটা পূরণ না হওয়াই অনিদ্রা রোগের লক্ষণ।
অর্থসূচক/এএইচআর