করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে ডলারের সঙ্কট তৈরি হবে এবং এ কারণে নতুন গাড়ি আমদানিতেও বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই বাংলাদেশে চলমান গাড়িগুলোই যাতে কমপক্ষে আগামী দুই বছর পর্যন্ত ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়, সেজন্য চলতি অর্থবছরে সব ধরনের স্পেয়ার পার্টস আমদানি শুল্কমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলদেশ অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন (বামা)।
আজ মঙ্গলবার (২৩ জুন) বাংলাদেশে অটোমোবাইল সেক্টরের ভূমিকা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার স্বার্থে সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবি পেশ করেছে সংগঠনটি।
দাবির মধ্যে আরো রয়েছে, বিদেশি লাইট ট্রাককে পিক-আপ রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা, স্পেয়ার পার্টস আমদানি শুল্কমুক্ত করা ইত্যাদি। এছাড়াও বাংলাদেশে অটোমোবাইল সেক্টরের বর্তমান অবস্থা এবং বিরাট রপ্তানির সম্ভাবনার রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বামা’র প্রেসিডেন্ট ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমাদ, রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, বামা’র ভাইস প্রেসিডেন্ট তাসকীন আহমেদ, ইফাদ গ্রুপের এমডি মিসেস সোহানা রউফ চৌধুরী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের টু হুইলার, থ্রি হুইলার, বাস, ট্রাক ও পিক-আপ শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তুলে ধরা হয়েছে। বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন যে, সরকারের নীতিগত সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশ নিকট-ভবিষ্যতে দুই ও তিন চাকার গাড়ি, বাস, ট্রাক, মিনিবাস এমনকি ইলেক্ট্রিক গাড়ি পর্যন্ত দেশেই নির্মাণ ও রপ্তানি করতে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্যে বামা গত জানুয়ারি মাস থেকেই কাজ করে যাচ্ছে।
বামা’র প্রেসিডেন্ট ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান মাতলুব আহমাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ২০২০ সালকে ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইয়ার’ ঘোষণা করেছেন, তখন চীন ও ভারত থেকে আসা লাইট ট্রাক গুলোকে এ দেশে ‘পিক-আপ’ নামে ভুল রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। অবিলম্বে দেশের স্বার্থে এটা এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন। বিআরটিএকে পিক-আপের সংজ্ঞা অবিলম্বে দিতে হবে এবং আগামীতে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।
রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় মোটরসাইকেলের গুরুত্ব তুলে বলেন, এখন দেশে মোটরসাইকেল শুধু উৎপাদনই হচ্ছে না, বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। সরকার এ খাত থেকে প্রতি বছর শুল্ক, কর ও ভ্যাট বাবদ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় করে থাকে।
তিনি গ্রামীণ জনপদে পরিবহণের ক্ষেত্রে থ্রি হুইলারের অবদান তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরনের ১৪ লাখ থ্রি হুইলার চলাচল করলেও এগুলোর রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত না থাকায় ওইসব থ্রি হুইলারের ৯০ ভাগই অবৈধ। এগুলোর রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ সরকার বছরে ২ হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারে। আর তখন দেশেই থ্রি হুইলার উৎপাদনও উৎসাহিত হবে।
তাসকীন আহমেদ তার বক্তব্যে তৈরি পোশাকশিল্প থেকে শুরু করে- খাদ্য, ওষুধ এবং দৈনন্দিন চাহিদার সব পণ্য পরিবহণে ট্রাকের গুরত্ব তুলে ধরেন। তিনি জানান, ট্রাক আমদানি খাত থেকে শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ সরকার প্রতি বছর আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আয় করে থাকে।
সোহানা রউফ চৌধুরী তার বক্তব্যে বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার কার্যকর উদ্যোগ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রশংসা করেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের কর্মসংস্থানে গণপরিবহন তথা বাস-মিনিবাসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, আগামীতে বাংলাদেশে বিশ্বের সবচাইতে উন্নত মডেলের এসি বাস, আর্কিলুটেড বাস ও এয়ার সাসপেনশন বাসে যাত্রীদের আরামদায়ক ও গতিশীল সেবা দেওয়া যাবে।
অর্থসূচক/এমআরএম/কেএসআর