নেলসন ম্যান্ডেলা (১৮ জুলাই ১৯১৮-০৫ ডিসেম্বর ২০১৩) দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী অবিসংবাদিত নেতা যিনি ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট যিনি প্রথম কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য ও বৈষম্যকে সরিয়ে বর্ণবাদকে ভেঙ্গে দেওয়া। রাজনৈতিকভাবে একজন আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক সমাজবাদী হিসেবে তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রধানের ভূমিকা পালন করেন।
থিম্বু রাজপরিবারের ‘জোসা’ গোত্রের এই সন্তান ‘ফোর্ট হ্যারি বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘উইটওয়াটারস্রান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে’, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। জোহানেসবার্গে অবস্তানকালে তিনি উপনিবেশ বিরোধী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ওই সময়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন। দলটির যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান ন্যাশনাল পার্টি ক্ষমতা গ্রহনের পর তিনি এএনসি (আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস)-র হয়ে ১৯৫২ সালে এক আন্দোলন করেন এবং সেখানে তিনি এএনসি-র ‘ট্রাসভাল’ অধ্যায়ের সুপারেন্টেন্ডের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে তাকে রাষ্টবিরোধী কর্মকান্ডে অভিযুক্ত করে আজীবনের জন্য কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
ম্যান্ডেলা প্রায় ২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে কাটান। প্রথমদিকে রোবেন দ্বীপ, পরবর্তীতে পোলসমোর কারাগার ও ভিক্টর ভারস্টার কারাগারে তিনি সাজা কাটান। তার মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিকভাবে এক প্রচার অভিযান চালানো হয় এবং সাধারণ জনগণের প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর ম্যান্ডেলা তার আন্তজীবনীমূলক গ্রন্থ রচনা করেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন প্রসিডেন্ট এফ.ডাব্লুউ ডি ক্লির্কের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সকল বর্ণের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালে এক নির্বাচন আয়োজন করেন যেখানে এএনসি-র হয়ে ম্যান্ডেলা জয়লাভ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলা জাতীয় ঐক্যবদ্ধতার দ্বারা সরকার প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে বর্ণবাদ নির্মূলের জন্য তিনি নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তিনি একটি নতুন সংবিধানের সৃষ্টি করেন এবং ‘ট্রুথ এন্ড রিকন্সিলেসন কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠন করেন যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্বের বিষয়গুলি নিয়ে তদন্তের ব্যাবস্থা করা হয়। ম্যান্ডেলা পূর্বের সরকারের সতন্ত্র অর্থনৈতিক নীতিকে অনুসরন করেন ও সেই সাথে তিনি ভূমি ব্যবস্থার উন্নয়ন, দারিদ্র নিরসন এবং সাস্থ সেবার দিকে বিষেশ গুরুত্ব দেন।
তিনি রাষ্ট প্রধানের মেয়াদ সফলতার সাথে শেষ করার পর দ্বিতীয় বারের মত ক্ষমতায় আসতে আগ্রহী হন নি এবং তার প্রতিনিধি হিসেবে ‘তাবো মবিকি’ ক্ষমতা আরোহন করেন। ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ‘নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেসনের’ মাধ্যমে জনহিতকর কাজে অংশগ্রহন করেন।
১৯৯৯ সালের পর তিনি শুধুমাত্র আফ্রিকার নেতাদের কাছেই নয় সারা পৃথিবীর নেতাদের কাছে এক মহান আদর্শ হিসেবে পরিণত হন। তবে তিনি ছিলেন তার জাতীর কাছে শুধুই ‘মাদিবা’। কেউ কেউ তাকে ‘টাটা’ নামেও সম্বধোন করতেন। যে সম্বধোন তার জোসা গোত্রে বাবাকে করা হয়ে থাকে। এছাড়াও তিনি তার কর্মকান্ডের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন এবং অর্জন করেছিলেন ২৫০টিরও বেশি সম্মাননা পদক। ১৯৯৩ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তার অন্যসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ‘ইউ এস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’, ‘সোভিয়েত অর্ডার অব লেনিন’, ও ‘ভারত রত্ন’।
প্রথমজীবন ও সামাজিক খেতাবঃ
ম্যান্ডেলা ১৮ই জুলাই ১৯১৮ সালে তার নিজ গ্রাম মেভিজোর উমটাটু নামক স্থানে জন্ম গ্রহন করেন। ম্যান্ডেলার প্রথম জীবন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রথার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিল। তিনি তার মা ও দুই বোনের সাথে কুনু গ্রামের এক বসতিতে বড় হয়েছিলেন। সেখানে তিনি গবাদিপশুর যত্ন নেওয়ার কাজ করতেন। তার পিতা-মাতা কেউই শিক্ষিত ছিল না কিন্তু একজন ধর্মপ্রাণ খৃষ্টান হবার দরুন তার মা তার সাত বছর বয়সে তাকে একটি স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। ম্যান্ডেলার নয় বছর বয়সে তার বাবা তাদের সাথে বসবাসের জন্য কুনুতে আসেন এবং সেখানেই তিনি এক অজানা রোগে মৃত্যুবরণ করেন। ম্যান্ডেলার মতে, এটি ছিল ফুসফুসের কোনো একটি রোগ।
পারিবারিকভাবে তর নামকরন করা হয় ‘রহিলাহলা জোসা’ কথ্য ভাষায় যার অর্থ ‘সমস্যাসৃষ্টিকারী’। পরবর্তীতে তিনি তার গোত্রিয় নাম ‘মাদিবা’ নামে পরিচিত হন। ম্যান্ডেলার প্র-পিতামহ ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মডার্ন ইস্টার্ন কেপ প্রভিন্সে বসবাসকারী থিম্বু জনসাধারণের শাসক। এই শাসকের কোনো এক সন্তানের নাম ছিল ম্যান্ডেলা এবং এটিই ছিল নেলসন ম্যান্ডেলার পারিবারিক ম্যান্ডেলা নামটির উৎস।
জোসা গোত্রিয় নাম ও পারিবারিক নাম ছাড়াও তকে ‘নেলসন’ নামে নামকরণ করা হয়েছিল তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। তার এই নামকরণের ঘটনাটিকে বর্ণনা করে ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ কোনোদিন স্কুলে যোগ দেন নি। আমি যেদিন প্রথম স্কুলে যাই ওই দিন আমার শিক্ষিকা আমাদের সকলকে একটি ইংরেজি নাম দেন। এটি ছিল ওই সময়ে আফ্রিকানদের একটি প্রথা এবং নিঃসন্দেহে ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাব। সেদিন আমার শিক্ষিকা আমাকে বলেছিলেন আমার নতুন নাম নেলসন। কেন এই নামটিই আমাকে দেওয়া হয়েছিল এ ব্যাপারে আমার জানা নেই।
ম্যান্ডেলাকে ‘টাটা’ নামেও সম্বোধন করা হত। জোসা ভাষায় যার আক্ষরিক অর্থ ‘বাবা’ এবং অত্যন্ত পছন্দের ব্যক্তিকেও এই সম্বোধন করা হত। সেই সুবাদে বহু আফ্রিকান বয়সভেদে তাকে এই নামে ডাকতেন।
১৬ বছর বয়সে জোসা গোত্রে পুরুষদের প্রাপ্তবয়স্ক হবার এক কৃত্য অনুষ্ঠানে তার নাম দেওয়া হয় ‘দালিভহুঙ্গা’ যার অর্থ সংলাপের নায়ক অথবা কোনো সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও ম্যান্ডেলাকে ‘খুলু’ যার অর্থ মহান বা বিশাল নামেও ডাকা হত।
শিক্ষাজীবনঃ
নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত মানুষ। তিনি শিক্ষা এবং আজীবন জ্ঞানার্জনে বিশ্বাস করতেন। এ বিষয়ে ম্যান্ডেলা বলেছিলেন ‘একটি ভাল হৃদয় ও একটি শিক্ষিত মস্তিষ্কই হল সবচাইতে উপযুক্ত স্বমন্বয়’। তার জীবনের প্রথম স্কুল ছিল ‘ওয়েসলিয়ান মিশন স্কুল’ যেখান থেকে তিনি তার নেলসন নামটি পেয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও একজন উপজাতি হিসেবে ম্যান্ডেলা কোনো কিছু শুনে রপ্ত করার কৌশল শিখেছিলেন তর গোত্রিয় শিক্ষা থেকে। যা ছিল একজন নেতা ও শান্তি সংগ্রামীর ভূমিকা পালনে সহায়ক। ১৬ বছর বয়সে ম্যান্ডেলা ‘ক্লার্কবুরি বোর্ডিং স্কুলে’ যোগ দেন এবং তিন বছরের জুনিয়র সার্টিফিকেসন কোর্স মাত্র দুই বছরে সফলতার সাথে শেষ করেন।
তিনি স্নাতক অধ্যায়নের জন্য ‘ফোর্ট হ্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ভর্তি হন, সেখানে তিনি প্রথম শিক্ষাবর্ষে ইংরেজী, নৃ-বিজ্ঞান, রাজনীতি, স্থানীয় প্রশাসন, ও রোমান এবং ডাচ আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। প্রথমবর্ষের শেষদিকে তিনি ‘স্টুডেন্টস রিপ্রেজেন্টেটিভ কাউন্সিলের’ খাবারের মানের বিরুদ্ধে এক বয়কটে যুক্ত হন, যে কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্থ করা হয়। পরবর্তীতে অধ্যয়ন শেষ না করেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। তিনি জোহানেসবার্গে ফিরে আসেন ও নৈশপ্রহরী হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন এবং তারপর তিনি রাজনৈতিক নানা কর্মকান্ডে জড়ান। তার অধ্যয়ন চালিয়ে যাবার জন্য তিনি ‘ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা’-র নৈশকালীন কোর্সে ভর্তি হন ও ১৯৪৩ সালে তিনি তার স্নাতক কোর্স শেষ করেন।
ম্যান্ডেলা আইন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ‘উইটওয়াটারস্রান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ভর্তি হন যেখানে তিনি ছিলেন একমাত্র আফ্রিকান স্থানীয় ছাত্র। অত্যাধিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কার্য ম্যান্ডেলা তাঁর শেষ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন।অবশেষে তিনি ‘লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে আইনের উপর ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৬৩ সালে।
রাজনৈতিক জীবন ও কারাবাসঃ
রাজনৈতিক জীবনে ম্যান্ডেলা এএনসি বা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের পক্ষে কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি এএনসি-র বেশকয়েকজন নেতার সাথে রাষ্টদ্রোহীতার দায়ে আটক হন। বহু বিতর্ক ও শুনানি শেষে অভিযুক্তরা আদালত থেকে তাদের অভিযুক্ত অপরাধের জন্য রেহাই পান ১৯৬১ সালে। তবে তার কিছুদিন পরই ১৯৬৩ সালে ম্যান্ডেলা পুনরায় একই অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এবং ওই সময় তাকে রাষ্টদ্রোহীতও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দায়ে আজীবনের জন্য কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছিল এবং বিচারকার্য শেষে নেলসন মেন্ডেলা তার এক ভাষণে আফ্রিকার গণতন্ত্র ও বর্ণবৈষম্যের ব্যাপারে তার মতবাদ ব্যাক্ত করে বলেন- ‘আমরা বিশ্বাস করি দক্ষিণ আফ্রিকার সকল মানুষেরা যারা এখানে বসবাস করেন, এটি কোনো নির্দিষ্ট সাদা বা কালো জাতি বা গোষ্ঠীর নয়। আমরা নিজস্ব বর্ণের মানুষের মধ্যে যুদ্ধ চাই না, আমরা চাই শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত এটিকে এড়িয়ে যেতে’।
নেলসন ম্যান্ডেলা, সাউথ আফ্রিকান সুপ্রিমকোর্ট, পিটোরিয়া, এপ্রিল ২০, ১৯৬৪
‘আমার জীবনে আমি আফ্রিকার মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছি। আমার যুদ্ধ সাদা বা কালো মানুষের একচ্ছত্র শাসনের বিরুদ্ধে। আমি এক আদর্শ আমার হৃদয়ে প্রতিপালন করেছি যেখানে এক গণতান্ত্রিক সমাজে সকল শ্রেণীর মানুষ সমান সুবিধা নিয়ে সু-সম্পর্কের সাথে থাকবে। এটি একটি আদর্শ যা অর্জনের জন্য আমি বেঁচে আছি এবং প্রয়োজনে এর জন্যই আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত’।
-নেলসন ম্যান্ডেলা, সাউথ আফ্রিকান সুপ্রিমকোর্ট, পিটোরিয়া, এপ্রিল ২০, ১৯৬৪
কারাগারে থাকা অবস্থায় ম্যান্ডেলা বর্ণবাদবিরোধী নেতা হিসেবে বিশ্বের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার মুক্তির দাবি জোরালো হয়ে ওঠে, বেশ কয়েকবার তৎকালীন আফ্রিকান সরকার তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দান করতে চাইলেও তিনি এএনসি-র মতাদর্শকে তার মুক্তির থেকে বড় মনে করেছেন।
মুক্তি ও গণজাগরনের অগ্রযাত্রাঃ
বিশ্বের প্রবল চাপের মুখে নেলসন ম্যান্ডেলাকে ফেব্রুয়ারী ১১, ১৯৯০ সালে মুক্ত করা হয়। ওই দিনটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য একটি উৎসব মূখর দিন। তার মুক্তিকে বর্ণবৈষম্য পতনের প্রতীক হিসেবে অবিহিত করা হয়। তার মুক্তির পরেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকেন এবং এর ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৪ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস ৬৫ শতাংশ ভোট নিয়ে জয়লাভ করেন এবং ম্যান্ডেলা প্রথম দক্ষিন আফ্রিকান প্রসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহন করেন।
তিনি অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের উপর গুরুত্ব দেন তবে অধিকার বঞ্চিতদের উপর অত্যাচারীদের প্রতিশোধ ম্যান্ডেলা নেন নি। তার এই ক্ষমাশীল মনোভাব ও সহনশীলতা সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করে ও দেশে একটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন-
‘যদি আমরা একটি সুন্দর দক্ষিণ আফ্রিকার সপ্ন দেখি তবে তা পূরনের পথ রয়েছে। পথ দুটি হল পবিত্রতা ও ক্ষমাশীলতা’।
১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় রাগবি বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয় যেখানে ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকান কালোদের ‘স্প্রিংবক্সকে’ সমর্থনের জন্য উৎসাহিত করেন। স্প্রিংবক্স দলটি পূর্বে সাদা জনগণের অধিপত্য বজায় রাখার জন্য একটি প্রতীক হিসেবে কাজ করেছিল। সকলকে অবাক করে ম্যান্ডেলা স্প্রিংবক্স ক্যাপ্টেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তার দলকে অভিন্দন জানান। বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা এক কাব্যিক জয় পায়, ওই দিন ম্যান্ডেলা স্প্রিংবক্সের জার্সি পরে মাঠে উপস্থিত হন এবং বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে ট্রফি তুলে দেন। ডি ক্লির্ক পরবর্তিতে বলেন, ম্যান্ডেলা লাখো সাদা রাগবি প্রেমিকের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছেন।
ম্যান্ডেলা ‘ট্রুথ এন্ড রিকন্সিলেসন কমিটির’ কার্যাবলীর উপর গুরুত্বারোপ করেন যেখানে পূর্বে বর্ণবৈষম্যের উপর অপরাধের তদন্ত করা হত। তবে তিনি ব্যাক্তিগতভাবে ব্যাপারটিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার ব্যাপারেও গুরুত্ব দেন যার দ্বারা জাতি সঙ্ঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে পারে। কমিটির দ্বায়িত্বে ছিলেন ডেসমন্ড টুটু পরবর্তিতে ম্যান্ডেলা তার কাজেরও প্রশংসা করেন।
ম্যান্ডেলা তার প্রসেডেন্টের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহন করেন ১৯৯৯ সালে। তার স্থলাভিষিক্ত হন ‘থাবো মবিকি’। অবসরের পরবর্তী বছরগুলিতে তার নিজস্ব ফাউন্ডেসনের মাধ্যমে জনকল্যাণকর কাজে অংশগ্রহন করেন, তবে বেশকিছু বিষয় নিয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন। ২০০৩ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রসিডেন্ট জর্জ ডাব্লুউ বুশের ইরাক আক্রমনের ব্যাপারে নিউজ উইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন-
‘এটা সত্যি যে আমি অবসরে যেতে চাই এবং আমার পরিবারের সাথে সময় ব্যয় করতে চাই তবে একজন বিবেকবান মানুষের পক্ষে এই বিষয়টিতে চুপ থাকা সত্যিই কঠিন’।
ব্যাক্তিগত জীবনে ম্যান্ডেলা তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তিনি ছয় সন্তানের বাবা। তার ১৭ জন নাতি-নাতনি রয়েছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখে ৯৫ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
তার মৃত্যুর পর আমেরিকার প্রসেডেন্ট বারাক ওবামা তার সম্পর্কে বলেন-
‘আমরা হয়ত নেলসন ম্যান্ডেলার মত আর কাউকে পাব না। তার আদর্শকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আজ আমাদের দায়িত্ব। তিনি আজ শুধু আমাদের নয় তিনি আজ প্রজন্মের