অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন আফরোজা পারভীন

সময় বদলেছে, সাথে বদলেছে দৃষ্টিভঙ্গি, তারপরও আফরোজা পারভীনের মতো সাহিত্যিক প্রয়োজন। কথাসাহিত্যিক, গবেষক, শিশুসাহিত্যিক, নাট্যকার, কলাম লেখক আফরোজা পারভীন সোজা সাপ্টা একজন সাহসী লেখক। তিনি তার সহজ সরল গোছানো লেখার মাধ্যমে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছেন- অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তরা সম্মননা প্রাপ্ত সাহিত্যিকে এভাবেই পরিচয় করিয়ে দেন।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে এ সম্মননা তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সাহিত্যিকের লেখা নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক আন্দালিব রাসদিন,হামীম কামরুল হক ও কথাসাহিত্যিক নাসরীন মুস্তাফা। সভাপতিত্ব করেন অনন্যা ও ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সাহিত্যিক ঝর্ণা রহমান। অনুষ্ঠানে আফরোজা পারভীন কে সম্মননা ক্রেস্ট,শুভেচ্ছা পত্র ও এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। শুরুতে তাকে উত্তরীয় পড়িয়ে দেয়া হয়।

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আফরোজা পারভীন বলেন, আমি ভাগ্যবান যে আমার পরিবার স্বংস্কিৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবার। বাবা-মা আমাকে কখোনোই মেয়ে হিসেবে আলাদা করেন নি। আমার স্বামী আমাকে লেখার শুধু উৎসাহই দেন নিই, নিজের সাধ্য মতো লেখার উপকরন কিনে দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, আমার সন্তানরা সব সময় উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু অনেক নারী আছেন তাদের প্রতীভা থাকলেও আমার মতো পরিবেশ ও পরিবার পায় না। লেখার খাতা পায় না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনে অনেক বড় উলট-পালট করে দেয়ার মতো ঘটনা। যে সময় আমি কৈশরে ছিলাম বলে আমার মা আমাকে পরিবারের সাথে রাখতেন না। মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যপট আমাকে লেখার অনুপেরণা দেয়। চারপাশের প্রত্যেকটি মানুষই এক একটি গল্প শুধু তার ভেতরের গল্পটাকে জানতে হয়।

তাসমিমা হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অনেক মানুষের অবদান আছে। যা আফরোজা পারভীনের লেখায়-কথাও আবারও প্রকাশ পায়। অনন্যা যোগ্য নারীকে সম্মননা দিতে পেরে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, আমরা এমন এক সময় অনন্যা শীর্ষ দশ ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান শুরু করি যখন সমাজে নারীকে মূল্যায়ন করা হতো না। আমরা এখন ডিজিটাল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। জীবন যাপনের ব্যয় দিন দিন বাড়ছে, নানা কারনে অস্থিরতা বিরাজ করছে সমাজে। সময়ের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে অনন্যা।

আন্দালিব রাশদী বলেন, আফরোজা পারভীন তার লেখার মধ্য দিয়ে দৃশপট আকঁতে পারেন। এটা তার লেখার বড় দিক। যখন তার লেখা পড়ি তখন মনে হয় দৃশ্য আর চরিত্র গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তিনি বলেন,সব ক্ষেত্রের মতো নারীর সাহিত্যে দাপটের সাথে বিচরন করছে।

হামীম কামরুল হক বলেন, আমাদের মধ্যে একটা বড় ধারনা যে লেখকের বেশি বই থাকে, তারা মান সম্পন্ন লেখক নয়। কিন্তু আফরোজা পারভীনের প্রকাশিত ১২৫টি গ্রন্থ প্রমান করেন তিনি ভালো লেখক। তিনি বলেন , আমারা লেখকরা মৌলিক লেখার পেছনে ঘুরতে ঘুরতে পিছিয়ে যাই। কিন্তু পুরোনো বিষয়ও প্রত্যেক লেখক নিজের মতো নতুন করে লিখতে পারে। তিনি বলেন, আফরোজা পরভীন একজন গোছানো ধ্রুপদি লেখক। তার লেখা পরলেই বোঝা যাবে মুক্তিযুদ্ধ তাকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে।

নাসরীন মুস্তফা বলেন, তার লেখার মধ্য দিয়ে তাকে আলাদা করা যায়। অনন্যা আফরোজা পারভীনকে অনেক দেড়ীতে খুজেঁ পেয়েছে। এখন বাংলা একাডেমীর পালা। অনুষ্ঠানে শুরুতে শিশু ইচ্ছে নারী কবিতা আবৃত্তি করে এবং সম্মননা প্রাপ্ত লেখকের উপর তাপস কুমার দত্ত পরিচালিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

 

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.