রিজার্ভ ও ব্যাংকে তারল্য নিয়ে গুজবে কান না দেওয়ার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

দেশবাসীকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকে তারল্য নিয়ে কোনো অপপ্রচারে কর্ণপাত না করার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক উন্নত দেশ বিপদের মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অনেক উন্নত দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপদে এবং সমস্যার সম্মুখীন, তাদের রিজার্ভ কমছে। সে অবস্থায় আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে পেরেছি।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ ও ‘আমর্ড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স’ এর গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে যখনই দেশ একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায় তখন সকলের কাছে (স্বার্থান্বেষী মহল) এটা পছন্দ হয়না, এটা হলো বাস্তবতা। জাতির পিতা একটি যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর কোভিডের আগে আওয়ামী লীগ তুলেছিল ৮ শতাংশের ওপরে। কিন্তু কোভিড-১৯ ও এর পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনে অনেক উন্নত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও বিপযস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ^ব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধনী দেশগুলোও আজকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায়ও বাংলাদেশকে এখনো আমরা স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়েছি। যুদ্ধকালীন এই সংকটে অনেক ধনী দেশ জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরাও নানা পদক্ষেপ নিই। অথচ জ্বালানি নিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে পক্ষে টানা হচ্ছে।

দেশের অতীত ও বর্তমান রিজার্ভের তুলনামুলক চিত্র তুলে দরে শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সালে একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় রিজার্ভ পেয়েছিল মাত্র ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন তাঁর সরকার সেই রিজার্ভ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার যখন সরকার গঠন করে তখন রিজার্ভ পায় ৫ বিলিয়ন ডলার যেটাকে টানা সরকারে থাকায় তাঁরা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হন। করোনার সময় যাতায়াত ও আমদানি বন্ধ ছিল। এ জন্য রিজার্ভ জমে যায়। পরে সব চ্যানেল খুলে গেলে আমাদের আমাদানিতে রিজার্ভ ব্যয় করতে হয়েছে। ভ্যাকসিন কেনা, টিকা গবেষণায় অর্থ দেয়াসহ করোনা চিকিৎসা সরঞ্জম ক্রয় করতে আমাদের অনেক টাকা লেগেছে। এগুলোর জন্য আমাদের ডলার খরচ হয়েছে।

তিনি বলেন, যখন কেবল মাত্র ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে তখন তাঁর সরকার ১২শ’ কোটি টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন আনার জন্য বুকিং দেয় এবং দেশের মানুষের জন্য ঝুঁকি নেয়। অথচ অনেক উন্নত দেশও বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়নি। সে সময় দেশের ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেনীকে তাঁর সরকার যে আর্থিক প্রণোদনা দেয় তাতেও অর্থ ব্যয় হয় এবং তৃনমূল পর্যায়ে অর্থসরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। ফলে করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি অর্থনীতিও ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যুদ্ধ এবং স্যাংশনের কারণে ইতোমধ্যে আমদানী ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি উদাহারণ দিয়ে বলেন, যে গম একসময় ২শ’ ডলারে পাওয়া যেত তা এখন ৬শ’ ডলারে কিনতে হচ্ছে। যে পরিবহন ব্যয় ৮শ’ ডলার ছিল তা ৩ হাজার ৮শ’ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু এখানে রিজার্ভ খরচ করতে হলেও তাঁর সরকার দেশের জনগণের কথা বিবেচনা করে কোন কার্পন্য করেনি। জাতির পিতা কেবল মাটি ও মানুষকে পুঁজি করেই একটি যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। সেটা সকলকে মনে রাখার মাধ্যমেই এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.