রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আরও ১ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্ক। সম্প্রতি বৃটিশ এই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবর ইন্ডিয়ান টাইমসের।
প্রসঙ্গত, রানা প্লাজার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দানের লক্ষ্যে একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। আর ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক শ্রমিকদের আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রথম ধাপে এই তহবিলে ২০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দেয় প্রাইমার্ক।
কোম্পানিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে শুধুমাত্র প্রাইমার্কের সাপ্লাইয়ার নিউ ওয়েভ বটমসের ক্ষতিগ্রস্ত ৫৮০ কর্মী এই অর্থ সহায়তা পাবে।
প্রতিবেদনে ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠনে নিয়োজিত কয়েকজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, নিহতের পরিবার গড়ে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার করে পাবে। অন্যদিকে যেসব শ্রমিকরা আহত হয়েছে তারা প্রত্যেকে এক বছরে ১৯ শত ডলার পাবে।
উল্লেখ্য, রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানা থেকে প্রাইমার্কসহ ওয়ালমার্ট, টেক্সম্যান, পিডব্লিউটি গ্রুপ, এনকেডি, ম্যাংগো, জেসিপেনি, গোল্ডেনপি ফেনিং, এলপিপি, ইসেনজা, কেয়ারফোর, সিঅ্যান্ডএ, ক্যাটোকোপ, চিল্ড্রেন প্লেস, বেনিটোন, আদিয়ার, আউচান, ড্রেসহার্ন, মেনিফাটুরা করোনা, প্রিমিয়ার ক্লোথিং, কিডস্ ফ্যাশন, স্টোর-২১, মাস্কট, মাটালান, এল কোর্টে ইনগিস, কিক, লবলো, বন মারচে, ক্যামিউ এর মতো মোট ২৯ কোম্পানি পোশাক কিনতো।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ক্ষতিপূরণে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বন মারসে, ইআই কোর্টি ইঙ্গল, লোবলো এবং প্রাইমার্ক অনুদান দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগামি ২৪ মার্চ এই তহবিলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে ফ্যাশন-টু-ফাইবার জানিয়েছে, রানা প্লাজা ক্ষতিপূরণ তহবিলের কার্যক্রম শুরুর হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন, ইন্ডাস্ট্রি অল এবং ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়ন। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে দ্রুত অর্থ সহায়তা প্রদানের আহবান জানানো হয়েছে।
রানা প্লাজা ক্ষতিপূরণ তহবিল সূত্রে জানা গেছে, সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি পরিকাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। তহবিলের সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাভারে একটি অফিস স্থাপন করা হবে। অর্থসহায়তার আবেদন প্রাপ্তির পর প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই এবং অনুসন্ধানের পর উপযুক্ত ব্যক্তিকে এই সহায়তা প্রদান করা হবে।
প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের অবস্থিত রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১১২৯ জন নিহত হয়। এই ঘটনায় আহত হয় আরও ২৫০০ মানুষ। নিহত এবং আহতদের অধিকাংশই রানা প্লাজায় বিভিন্ন পোশাক উৎপাদক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
তবে ওই ভয়াবহ ঘটনাটির প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও মেলেনি কাঙ্খিত ও প্রতিশ্রুত সহায়তা। মানবেতর জীবন যাপন করছে এই অসহায় আহত ও স্বজন হারানো শ্রমিক পরিবার। আহত অনেকের এখনও চিকিৎসার প্রয়োজন।
এক হিসাবে দেখা যায় গত একদশকে বাংলাদেশে পোশাক কারখানা ধস, কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনায় প্রায় ১৮ শ শ্রমিক নিহত হয়েছে।অথচ ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উদ্যোগে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশের যেসব সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে তারা হচ্ছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার এ্যন্ড এক্সপোর্টার এসোসিয়েশন, ইন্ডাসট্রিয়াল অল গ্লোবাল ইউনিয়ন, বাংলাদেশ এমপ্লোয়ারস ফেডারেশন এবং মেইন বাংলাদেশ কোয়ালিশন অব লেবার ইউনিয়ন।