দেশের তৈরি পোশাক খাতে রানা প্লাজা ও তাজরিনের মতো দূর্ঘটনা পরে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে কর্মপরিকল্পনা ও শর্ত বেধে দেয় তার বেশির ভাগই ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ। বাকি যে দুএকটি শর্ত এখনও পূরণ হয়নি তা খুব শিগগিরই শেষ হবে বলেও মনে করেন তিনি। আর যুক্তরাষ্ট্রের বেধে দেওয়া এই শর্ত পূরনের পর আসছে জুনেই জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে পাঁচ দেশের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে সচিবালয়েই বাণিজ্য, পররাষ্ট্র ও শ্রমসচিব এবং পাঁচ রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে গঠিত তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়ন-বিষয়ক ‘থ্রি প্লাস ফাইভ’ কমিটির সভা হয়।
তবে সভা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা সাংবাদিকের জানান যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি ফিরে পাওয়ার জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
এর মধ্যে ইপিজেডগুলোতে শ্রম আইন বাস্তবায়ন করা অন্যতম জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে তোফায়েল আহম্মদে জানান, রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চলের(ইপিজেড) আইনের সাথে প্রচলিত শ্রম আইনের সমন্বয়ের মাধ্যমে খুব শিগগিরই এই এলাকায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন করা হবে।
তবে তিনি মনে করেন এজন্য আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে।বাড়তি সময় লাগার বিষয়ে ‘থ্রি প্লাস ফাইভ’ কমিটিও মন্ত্রীর মতামতকে সমর্থন জানিয়েছে।
মন্ত্রী আশা করেন আগামি ৩১ মার্চের মধ্য সকল পোশাক কারখানা তার শ্রমিকদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করতে পারবে। আর সেটা হলে আসছে ১৫ এপ্রিলই এই বিয়ে একটি পুর্নাঙ্গ প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে।এরপর জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নেবে।
মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া কর্মপরিকল্পনা ও শর্তগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে জুন মাসেই জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবে বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে ১১২ জনের মৃত্যু এবং গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১১৩২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর গত বছর জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার (জিএসপি) স্থগিত করে দেশটি। এই সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু শর্তসহ একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে ওবামা সরকার।
তবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে এক শুনানিতে দেশটির ব্যুরো অব ইন্টারন্যাশনাল লেবার অ্যাফেয়ার্সের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্বে থাকা এরিক বিয়েল বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধায় বাংলাদেশ যে পণ্য বিক্রি করত, তা দেশের ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানির ১ শতাংশের মতো। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশকে বড় ধরনের অসুবিধায় পড়তে না হলেও এর প্রভাব ইউরোপের ক্ষেত্রে পড়লে বাংলাদেশের বাণিজ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।