বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় আমদানিকারকদের আগে কোনো শুল্ক দিতে হতো না। নতুন করে এই পণ্যে ২৫-৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছে ভারত। এ ধরনের সিদ্ধান্তে দেশের পাট ও পাটজাত রপ্তানি কমে যেতে পারে। ফলে এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের জুট মিলস্ অ্যাসোসিয়েশন, স্থানীয় উদ্যোক্তারা তাদের বাজার সুরক্ষায় বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য আমদানির উপর এন্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়ে আসছিল। সেই দাবির প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সচিব এ বারিক খান অর্থসূচককে বলেন, এখন থেকে ভারতীয় আমদানিকারকদের বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে পাট ও পাটপণ্য আমদানিতে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। ফলে বাংলাদেশের পাট রপ্তানি কমার পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়বে সোঁনালী আশ খ্যাত এই শিল্প।
তিনি বলেন, এতোদিন আমরা শূন্য শুল্কে ভারতে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করতাম। তবে এখন এন্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের ফলে আমাদের পাটশিল্প চরম ক্ষতির মুখে পড়বে। এক্ষেত্রে সরকারকে এখনই কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (ডিসিসিআই) জানায়, ভারতের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে আমাদের পাট চাষী এবং পাটপণ্য উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকাররা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেন। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ব্যবধান আরও বেড়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ যখন ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নয়নে কাজ করছে, সে সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত দুদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের ধারাকে ব্যাহত করবে বলে মনে করে ডিসিসিআই।
ডিসিসিআই জানায়, বিষয়টি পূণর্বিবেচনা করে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার জন্য ডিসিসিআই বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। একইসঙ্গে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ করছে।
বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানিতে এন্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অর্থসূচককে বলেন, কোনো দেশ তখনই আমদানি পন্যের উপর এন্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করতে পারে যখন রপ্তানিকারক দেশ উৎপাদন মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য রপ্তানি করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি উৎপাদন মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য রপ্তানি না করে তাহলে সে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে অভিযোগ করতে পারে। তবে এ বিষয়টি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। এন্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের ফলে আমাদের পাটশিল্পে কী ধরণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে তা তুলে ধরা উচিত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র তথ্যমতে, বাংলাদেশ ২০১৬ অর্থবছরে প্রায় ৯১৯ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেছে। যার ২০ শতাংশ শুধু ভারতের বাজারেই রপ্তানি হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে যার পরিমাণ প্রায় ৮ শতাংশ।
অর্থসূচক/মেহেদী/শাহীন