কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ৮ ব্যাংক

সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে কৃষি খাতে ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। বেশিরভাগ ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিতরণ করলেও সরকারি-বেসরকারি আটটি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।

সরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বেসিক ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইলসামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং মধুমতি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেশিরভাগ ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিতরণ করেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ১৯ কোটি টাকা বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এই অর্থবছরের জন্য কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। বিতরণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকের তালিকায় থাকা এবি ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য ছিল ৫২১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ দিয়েছে ১৬৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। সরকারি বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫৭ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৭৩২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২২৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দিয়েছে মাত্র ৭৭ কোটি টাকার কাছাকাছি। মধুমতি ব্যাংক ৯০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও এর বিপরীতে ঋণ বিতরণ করেছে ৭ কোটি টাকার কিছু বেশি। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৩৫ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ১৩ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল ৬১২ কোটি টাকা কিন্তু তারা বিতরণ করেছে ১৭১ কোটি যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৬২টি ব্যাংক। এরমধ্যে সবাই কৃষি ঋণে অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি দেশে কার্যরত আটটি বিদেশি ব্যাংকের সবাই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে। অন্যদিকে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যেই অনিহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষককে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে।

দেশের অর্থনীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি খাতের অবদান প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এমন বাস্তবতায় কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে প্রতিবছর কৃষি ও পল্লীঋণ নামে নীতিমালা প্রণয়ন করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালার আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক-পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নও তদারকি করা হয়। প্রথা অনুযায়ী এবারও কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণের নীতিমালা শিগগিরই জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় অন্য ঋণের চেয়ে কৃষি ও পল্লীঋণের সুদহার তুলনামূলক কম। গত অর্থবছরে সুদহার নির্ধারণ করা ছিল সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ। তবে সব কৃষক এই সুদহারে ঋণ পাননি। কারণ ব্যাংকগুলোর এনজিও বা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) নির্ভরতার কারণে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের ঋণ পেতে গুনতে হয়েছে ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ।

এদিকে চলতি অর্থবছরের অন্যান্য ঋণের সঙ্গে কৃষিঋণের সুদহারের সীমাও তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কৃষিঋণের সুদহারও নির্ধারিত হবে ‘সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট’ বা স্মার্ট পদ্ধতিতে। নতুন এ নিয়মে ছয় মাসের (১৮২ দিন) ট্রেজারি বিলের গড় হার ধরে ঠিক হবে রেফারেন্স রেট। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ২ শতাংশ যোগ করে কৃষিঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। এ নিয়মে জুলাই থেকে কৃষিঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এতে ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি কৃষিঋণ বিতরণ করলেও সুদহার ১ শতাংশের বেশি বাড়বে। তার পরও এনজিও-নির্ভরতায় বিতরণ করা ঋণের সুদের তুলনায় এটি অনেক কম।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.