লোকসানি কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও নকল কাগজপত্র তৈরি করে রাইট শেয়ার ইস্যুর আবেদন করার অভিযোগে মাইডাস ফিন্যান্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার উপ-পরিচালক খলিলুর রহমানকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির (এনবিএফআই) বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারনারও অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক সূত্রে এ তথ্য।
দুদক সূত্র জানায়,টানা কয়েক বছর লোকসানে থাকার পরও মাইডাস ফাইন্যান্স রাইট শেয়ার ঘোষণা করায় ইতোপূর্বে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানি ও ইস্যু ম্যানেজারকে জরিমানা করেছিল। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদন কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা দেখিয়ে দ্বিতীয় দফায় গত ১৯ আগস্ট রাইট শেয়ার ঘোষণা করলে এ নিয়ে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুদকের কাছে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়,২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মাইডাস ফাইন্যান্সের লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১২-১৩ সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে (এপ্রিল-জুন-২০১৩) কোম্পানিটি লোকসান কাটিয়ে উল্টো ৯৪ লাখ টাকা লাভ দেখানো হয়েছে। এটি কারসাজির মাধ্যমে করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে কোম্পানি,বিএসইসির কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে একজন বিনিয়োগকারী দুদকে অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করে দুদক।
সূত্র জানায়,মাইডাস ফাইন্যান্স গত কয়েক বছর ধরে লোকসানে রয়েছে। ২০১১-১২ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি লোকসান দেয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। এতে করে ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর কোম্পানিটি ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে আছে। তারপরেও ২০১২ সালের ২৮ জুন ৩টি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ২টি রাইট শেয়ার ঘোষণা করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে ২০১৩ সালের ৭ মে বিএসইসি লোকসানে থাকার পরও রাইট শেয়ার ঘোষণা দিয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) রুলস ২০০৬-এর ৩ (এইচ)ধারা লঙ্ঘন করায় মাইডাস ফাইন্যান্সকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে। একই অপরাধে কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার লঙ্কা-বাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে আরও দুই লাখ টাকা জরিমানা করে।
এদিকে ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে (জুলাই-সেপ্টেম্বর,২০১২)কোম্পানিটি লোকসান দেয় ৮ কোটি টাকা এবং পুঞ্জিভূত (একিউমুলেটেড)লোকসান ১৯ কোটি টাকা। পরে (জুলাই-ডিসেম্বর,২০১২)অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ কোটি টাকা এবং পুঁঞ্জিভুত লোকসান হয় বেড়ে হয় ২৫ কোটি টাকা। তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ,২০১৩) কোম্পানিটির লোকসান হয় ৯ কোটি টাকা এবং পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু হঠাৎ করে এই কোম্পানিটির ৩০ জুন ২০১৩ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে ৯৪ লাখ টাকা মুনাফা দেখানো হয়। অর্থাৎ ২০১২-১৩ সমাপ্ত অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির ৩৪ কোটি টাকা লোকসান হলেও শেষ তিন মাসে লোকসান কাটিয়ে উল্টো ৯৪ লাখ মুনাফা দেখানো হয়। এই মুনাফা দেখিয়ে কোম্পানিটি গত বছরের ১৯ আগস্ট পুনরায় ১টি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ১টি রাইট শেয়ার ঘোষণা করে।
এদিকে রাইট শেয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরের দুই কোয়ার্টারেও কোম্পানিটির লোকসান অব্যাহত রয়েছে।