শিক্ষকতাই একমাত্র পেশা এমদাদের। এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারে ছাত্রদের পড়ানোর পাশাপাশি গ্রামের নিরক্ষর বয়স্ক মানুষদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চালু করেছেন নাইট স্কুল। আর এ কাজটিকেই জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার মৃত কাজী ওয়াজেদ আলীর ছেলে কাজী এমদাদ হোসেন। তার বাবা ওয়াজেদ আলী এলাকার অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের সাহায্যে সব সময় তাদের পাশে দাঁড়াতেন। তাঁর এই সুনাম গ্রামের মানুষের এখনও মুখে মুখে ফেরে। ঠিক যেন বাবার মতোই স্বভাব পেয়েছেন এমদাদ। লেখাপড়া শেষ করে কাজী এমদাদ হোসেন খুলনায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ওই চাকরি তার ভালো লাগেনি। চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন বাড়িতে। গ্রামে এসে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা ও টিউশনি শুরু করেন।
গ্রামের দরিদ্র অসহায় মানুষের বিপদ আপদে তাদের পাশে গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। নিরক্ষর দরিদ্র মানুষের সাহায্যে করতে গিয়ে এমদাদের মনে হয়েছে অক্ষরজ্ঞানহীন এসব দরিদ্র মানুষদের শিক্ষাসচেতন করা প্রয়োজন। তাই তিনি আড়াই বছর আগে বয়স্কদের জন্য নাইট স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম তিনি নিজের গ্রাম দৌলতপুর প্রাইমারি স্কুলের একটি কক্ষে বয়স্কদের নাইট স্কুল চালু করেন। গ্রামের নিরক্ষর মানুষের লেখাপড়া শেখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝিয়ে তাদের স্কুলে আনতে শুরু করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ধর্মীয় ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক শিক্ষা দিচ্ছেন তাদের। গত আড়াই বছরে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেখে এমদাদ পার্শবর্তী খালকুলা, রঘুনাথপুর ও কাকলাশ গ্রামে আরও ৩টি নাইট স্কুল চালু করেছেন।
এমদাদের নাইট স্কুলে পা রাখতেই হাসেম আলী নামে এক বয়স্ক ছাত্র (ভ্যান চালক) এই প্রতিবেদককে বলেন- “লেখা পড়া শিখতে আইছি, এখন আমি “অ আ” লিখতে পারি, নাম-সইও করতে পারি” । কথাগুলো বলার সময় তার চোখে মুখে অন্যরকম এক আনন্দ দেখা যাচ্ছিল। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে সন্ধ্যার পর তিনি বই শ্লেট নিয়ে ছুটে আসেন এই নাইট স্কুলে।
কাজী এমদাদ হোসেন বলেন, তার চারটি নাইট স্কুলে ৯২ জন বয়স্ক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, শ্লেট, হারিকেন, কেরোসিন তেলসহ স্কুলের যাবতীয় খরচ করেন এমদাদ। এলাকায় শিক্ষকতা করে মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় হয়। তার এই রোজগার থেকে প্রতি মাসে ৪টি নাইট স্কুলের জন্য খরচ হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এমদাদ খুব খুশি যে তার এই ভালো কাজের জন্য এলাকার সবার সহযোগিতা পাচ্ছেন। এলাকার শিক্ষিত পাঁচ যুবক স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে কাজ করছেন। তারা হলেন- কলেজ ছাত্র খালিদ হাসান বাপ্পি, ভবেশ দাস, ব্যবসায়ী কর্ণ বিশ্বাস, কৃষিজীবী ধীরেন্দ্র নাথ ও আলেকুজ্জমান। এছাড়া সহযোগিতা করছেন স্থানীয় অগ্রগামী কোচিং সেন্টারের পরিচালক রফিকুল ইসলাম।
সরেজমিনে এমদাদের নাইট স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, ১৪ থেকে ৫৩ বছরের ছাত্ররা হারিকেন, মোমবাতি বা চার্জের টর্চলাইট জ্বালিয়ে কেউ চক সিলেট কেউবা খাতা কলম নিয়ে লেখাপড়া করছে। আর রুমের মধ্যে ঘুরে ঘুরে তদারকি করছেন এমদাদ। বর্তমানে নাইট স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ৬৫ জন। পেশায় কেউ কৃষক, কেউ দিনমজুর, কেউবা ভ্যানচালক। উপস্থিত ছাত্ররা জানান, শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বাজারের ২ দিন ছাড়া বাকি ৫ দিন তারা নাইট স্কুলে ক্লাস করেন।
কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বলেন, ছোট বেলা থেকেই এমদাদ সমাজ সেবামূলক কাজে খুবই আগ্রহী। তার নাইট স্কুলে লেখাপড়া করে এলাকার অনেক নিরক্ষর মানুষ আজ নাম স্বাক্ষর করতে পারছে।
কেএফ