লিটনের সেঞ্চুরি

পঞ্চম দিনে গিয়ে ড্র হয়েছিল চট্টগ্রাম টেস্ট। তাতে ঢাকা টেস্ট দুই দলের জন্যই সিরিজ নির্ধারণী। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক।

এদিন একাদশে দুটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। ইনজুরির কারণে ছিটকে যাওয়ার নাঈম হাসানের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পেয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তাতে বছর তিনেক পর বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলতে নামছেন এই অলরাউন্ডার। এ ছাড়া পেসার শরিফুল ইসলামের বদলি হিসেবে ঢাকা টেস্টের একাদশে এবাদত হোসেন। শ্রীলঙ্কার একাদশে লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন প্রভীন জয়াবিক্রমা। আর ইনজুরির কারণে চট্টগ্রাম টেস্টের মাঝ পথে ছিটকে যাওয়া বিশ্ব ফার্নান্দোর বদলি হিসেবে খেলছেন কনকাশন সাব হিসেবে প্রথম টেস্ট খেলা কাসুন রাজিথা।

দিনের প্রথম বলেই মাহমুদুল হাসান জয়ের বিপক্ষে আবেদন করেছিলেন পেসার কাসুন রাজিথা। তবে তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে পরের বলেই জয়কে ফেরান ডানহাতি এই পেসার। এবার অবশ্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হয়নি রাজিথাকে। ডানহাতি এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন জয়।

প্রথম ওভারে জয়কে হারালেও রাজিথার পঞ্চম বলে চার মেরে বাংলাদেশের রানের খাতা খুলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ রানের খাতা খুললেও জয়ের মতো শূন্যতে ফিরেছেন তামিম ইকবাল। আসিথা ফার্নান্দোর লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফেরেন চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরিয়ান। ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছে না মুমিনুল হকের। তবে তামিমের ফেরার পরের বলে চার মেরে রানের খাতা খোলায় খানিকটা আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ককে। তবে সেটা ধরে রাখতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। আসিথার আউট সাইড অফ স্টাম্পের লেংথ ডেলিভারিতে খানিকটা দেরিতে ব্যাট চালিয়েছেন মুমিনুল। তাতে এজ হয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় ৯ রান করা এই ব্যাটারকে।

চট্টগ্রামে ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসেও। শান্ত ফেরার পরের বলেই বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন সাকিব। রাজিথার ফুল অব সুইং ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তৎক্ষণাৎ রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। তাতে গোল্ডেন ডাকে ফিরতে হয় সাকিবকে।

রাজিথা ও আসিথার বোলিং জুটিতে দিনের শুরুটা দারুণ করে শ্রীলঙ্কা। তবে প্রথম সেশনের প্রায় শেষ দিকে এসে দুঃসংবাদ পেতে হয় সফরকারীদের। ইনিংসের ২৩তম ওভারের প্রথম বলের সময় হঠাৎই বুকে ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়েন কুশল মেন্ডিস। পরবর্তীতে চেকআপের জন্য তাকে দ্রুতই হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

এদিকে সকালের শুরু লঙ্কান পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট বাংলাদেশের শুরুর বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। তাদের দুজনের ৪২ রানের অবিচ্ছন্ন জুটিতে প্রথম সেশনে বাংলাদেশের সংগ্রহ৫ উইকেটে ৬৬ রান। লিটন ২৬ এবং মুশফিক অপরাজিত ২২ রানে।

২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে তোলেন লিটন দাস। দিনের শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। পুরোটা সময় স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করলেও হাফ সেঞ্চুরির ঠিক আগে জীবন পেয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ডানহাতি এই পেসারের বলে হুক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন লিটন। তবে সেটা লুফে নিতে পারেননি কামিন্দু মেন্ডিস। তবে জীবন পেয়ে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ভুলেননি লিটন। আসিথার বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে ৯৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ এক সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। চট্টগ্রামে যেখান থেকে শেষ করেছিলেন ঢাকায় যেন সেখান থেকেই শুরু করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। দ্রুত উইকেট হারানোর পরও নিজের সহজাত ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। জয়াবিক্রমার টসড আপ ডেলিভারিতে কভার দিয়ে চার মেরে ১১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক। টেস্ট ক্রিকেটে এটি তার ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি।

দিনের প্রথম সেশনে ৫ উইকেট হারালেও দ্বিতীয় সেশনে দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। লিটন-মুশফিকের দারুণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৭ রান তুলেছে স্বাগতিকরা। শুরুর বিপর্যয় সামলে ষষ্ঠ উইকেটে দেড়শ রানের জুটি গড়েছেন মুশফিকুর রহিম এবং লিটন দাস। ৩১০ বলে এই জুটি গড়েছেন তারা দুজন। যেখানে মুশফিক ৭০ এবং লিটন ৭৮ রান অবদান রেখেছেন।

নিয়মিত বোলারদের দিয়ে লিটন-মুশফিকের জুটি ভাঙতে না পারায় নিজেই বোলিংয়ে আসেন দিমুথ করুনারত্নে। ডানহাতি এই স্পিনারের আউট সাইড অফ স্টাম্পের বল মুশফিকের প্যাডে আঘাত করলে আবেদন করে শ্রীলঙ্কা। তবে সেই আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। যে কারণে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন করুনারত্নে। পরবর্তীতে রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যায়। তাতে রিভিউ হারায় শ্রীলঙ্কা।

দিনের পুরোটা সময়ে একবারই লঙ্কানদের সুযোগ দিয়েছিলেন লিটন দাস। তবে সেটা লুফে নিতে পারেননি কামিন্দু মেন্ডিস। জীবন পেয়ে সেটা কাজে লাগিয়েছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। চট্টগ্রাম টেস্টে খুব কাছে গিয়ে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেও এদিন ভুল করেননি লিটন। দারুণ ব্যাটিংয়ে ১৪৯ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.