এসকে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে রায় আজ

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ (এস কে সিনহা) ১১ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) ঘোষণা হবে। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি- আদালত যদি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করেন, তবে আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা পাবেন।

মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম এ বিষয়ে বলেন, ‘সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছিলেন প্রধান বিচারপত। ওই অবস্থানে থেকে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত ছিল, সেটা না করে ব্যাংকারদের লোন দেওয়ার আয়োজন করেন তিনি। এরপর মানিলন্ডারিং করেছেন। তিন ধারায় আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা রয়েছে। আমরা আদালতের কাছে সমস্ত ডকুমেন্ট সাবমিট করেছি। আশা করি আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা পাবেন।’

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি এসকে সিনহা শুরু থেকে পলাতক। মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে যে ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, সেই ধারায় অভিযোগ প্রমাণ হয় না। মামলাটিতে চার কোটি টাকা ঋণের কথা বলা হয়েছে। এর অধিকাংশই পরিশোধ করা হয়েছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই করে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। তখন এ নিয়ে প্রশ্ন আসেনি। পরে বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাকালীন বাবুল চিশতি ছিলেন অডিট কমিটির চেয়ারম্যান। ব্যাংকার হিসেবে ছিলেন লুৎফুল হক। চিশতি সাহেবকে জড়িত করা হয়েছে প্রত্যক্ষ প্রভাবে। আশা করি রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। এজন্য তারা খালাস পাবেন।’

১৪ সেপ্টেম্বর একই আদালতে মামলাটির উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুনানি শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য ৫ অক্টোবর ধার্য করেন আদালত।

এর আগে ২৯ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। গত বছরের ১৩ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-৪ এ বদলির আদেশ দেন।

২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ। এর আগে ৪ ডিসেম্বর কমিশনের সভায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদন দেওয়া হয়।

মামলার আসামিদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) কারাগারে আছেন। এ ছাড়া ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান ও একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা জামিনে আছেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন। এক আসামি মারা যাওয়ায় চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকায় মামলাটি দায়ের করা হয়। দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন এ মামলার বাদী।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিলেন কথিত ব্যবসায়ী শাহজাহান ও নিরঞ্জন। সেই টাকা রনজিৎ চন্দ্র সাহার হাত ঘুরে সিনহার বাড়ি বিক্রির টাকা হিসাবে দেখিয়ে তার ব্যাংক হিসাবে ঢুকেছে। এ অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নামে দুদক।

২০১৯ সালের জুলাইতে মামলা করে সংস্থাটি। মামলায় সাবেক ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ভুয়া তথ্য দিয়ে অন্যের নামে চার কোটি টাকার ঋণ করে পরে তা এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করার অভিযোগ আনা হয়।

দুদক বলছে, মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বিদেশে অবস্থারত এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে নতুন করে আসামি হয়েছেন ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী।

উল্লেখ্য, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং এ সংক্রান্ত কিছু পর্যবেক্ষণ লেখেন এসকে সিনহা। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.